বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয় মায়ানমার
নিউজ ডেস্ক:
মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বারবার আগ্রহ দেখালেও তেমন কোনো সাড়া নেই দেশটির পক্ষে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দায় যেন শুধুই বাংলাদেশের। তবে সদ্য সামরিক শাসনমুক্ত হওয়া এ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিতে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শনকেই বাংলাদেশের জন্য সঠিক পন্থা বলে মনে করছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের মাধ্যমে গ্যাস, বিদ্যুত আমদানির মত নানা বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের মধ্যে কয়েকটি সরকারি সফর বিনিময় হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা এবং বিজিবি’র নায়েক রাজ্জাক ইস্যু সামনে আসায় পিছিয়ে গেছে সবকিছুই। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও সাড়া মিলছে না এই প্রতিবেশী দেশটির।
চলতি মাসেও মায়ানমারের থেকে একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসার কথা ছিলো। বাংলাদেশে গ্যাস রফতানি, এর সম্ভাব্য রুট, প্রক্রিয়াসহ সকল বিষয়গুলো যাচাইয়ের জন্য দলটির আসার কথা থাকলেও তারা এখনই আসছে না বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। গত বছরের আগস্ট মাসে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে মায়ানমার থেকে গ্যাস এনে সেই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মায়ানমারের চিন প্রদেশে রফতানির প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ।
এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলীকদম কিংবা থানচি উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে মায়ানমারের কালাদান প্রকল্পের দালেতমে কিংবা পালেতা পর্যন্ত সড়ক পথের নতুন যোগাযোগের রুট প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি মায়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এই এলাকা পরিদর্শন সেদেশের পরিবহন মন্ত্রীকে রুটটির বিষয়ে অবহিত করেন। তার প্রস্তাবে রাজি হয় মায়ানমারের মন্ত্রী। এ সড়ক সংলগ্ন একটি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করে মিয়ানমারে বিদ্যুৎ রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মায়ানমার বাংলাদেশের টেকনাফকে নিরাপত্তাজনিত এবং ধর্মীয় দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কায় স্পর্শকাতর অঞ্চল বলে মনে করে। তাদের উদ্বেগের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ বান্দরবনের আলীকদম কিংবা থানচি উপজেলা দিয়ে যোগাযোগ করতে চায়। দুই দেশের প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে পারলে ভারতের মিজোরাম থেকে মায়ানমারের কালাদান যাওয়ার রাস্তাটির সঙ্গেও সংযুক্ত হওয়া যাবে। আর এ রুটটি দিয়ে বিদ্যুত এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন করাও সহজ হবে।
তবে মায়ানমারের প্রতিনিধি দলের সফরের জন্য এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ আটকে আছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক আসুদ আহমেদ। তিনি বলেন, “মায়ানমারের কারিগরি দলটি ঠিক এ মাসে আসছে না। আমাদের পক্ষ থেকে পরবর্তী তারিখ জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে তারা এখনো কিছু জানায়নি।”
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড়ে একটু কোণঠাসা মায়ানমার। বিশেষ করে মানবপাচারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রতি অঙ্গুলি হেলনে চাপের মুখে দেশটি। তাই দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগে কিছুটা ধীরে চল নীতি অনুসরণ করছে তারা।
এছাড়া মায়ানমারের কারিগরি দলটি না আসার পেছনে গতমাসে ‘নায়েক রাজ্জাক কাণ্ড’ কিছুটা ভূমিকা রেখেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। কূটনৈতিক সূত্র আরও বলছে, বাংলাদেশ সম্পর্কে আজো স্পষ্ট ধারণা হয়নি মায়ানমারের। ফলে তাদের আস্থা অর্জনে সময় লাগছে। তাদের মতে, প্রতিবেশীর বিশ্বাস অর্জনে তাই আরো বেশি চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে কূটনৈতিক সাফল্য পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ধীর চল নীতিই আসল অস্ত্র।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবেশী বদল করা সম্ভব নয়। তাই যেকোন মূল্যে সুসম্পর্ক রাখাটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। সেটা সময় নিয়ে হলেও কোন অসুবিধা নেই। এতে বাংলাদেশের দুর্বলতা প্রমাণ হয় না। বরং সুসম্পর্ক রক্ষায় বাংলাদেশের আচরণ বিশ্ব কূটনীতিতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।