বান্দরবানে তিন যুগের পরিবহণ নৈরাজ্য: অভিযোগের তীর পূরবী ও পূর্বাণীর উপর

fec-image

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের নানা সেক্টর যেমন উন্নতি হচ্ছে সড়ক ও পরিবহণেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু পার্বত্য জেলা বান্দরবানে দীর্ঘ তিন যুগ ধরে পূরবী ও পূর্বাণী নামে দুটি পরিবহণ মালিকপক্ষ পরিবহন সেক্টরকে জিম্মি করে রেখেছে বলে  অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই দুটি পরিবহণ ছাড়া এই জেলা শহর থেকে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে আধুনিক কোন পরিবহণ আসতে দেয়নি এই সিন্ডিকেট।

অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে বান্দরবানে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয় বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি জনগণের সাথে। পরিবহণ সেক্টরে নৈরাজ্যের পেছনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বান্দরবানের হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া অমল দাশ প্রকাশ (টায়ার অমল) নামে এক পরিবহন মালিক নেতা। তার পিছনে ইন্দন দাতা হিসেবে রয়েছেন আরো দুই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) বান্দরবান বাস স্টেশনে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে জনসাধারণের মুখ থেকে এমন তথ্য উঠে আসে।

সরেজমিনে পূর্বাণী ও পূরবী পরিবহণে বাধ্য হয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী একাধিক যাত্রীরা জানান- এই দুটি পরিবহণ লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়ি নিয়ে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সড়কের যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছে। তাদের গাড়িগুলো অত্যন্ত নোংরা, অরুচিকর পরিবেশ, কন্ট্রাকটরের দুর্ব্যবহার, অদক্ষ ড্রাইভার, যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে লোক ওঠানো, গাদাগাদি প্যাসেঞ্জার তোলার কারণে বর্তমানে মানুষ ফুঁসে উঠেছে। এই অবস্থায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে বিআরটিসি অনেকটা যাত্রীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বিআরটিসির এই পরিবহণ সেবা বান্দরবান-কক্সবাজার সড়কেও চালুর দাবি জানান তারা।

এদিকে গত মঙ্গলবার কোন ধরনের ইস্যু ছাড়া হঠাৎ পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয় পূর্বাণী-পূরবী মালিক-শ্রমিকরা। ওই দিন পরিবহণ সিন্ডিকেটের গডফাদার হিসেবে পরিচিত অমল দাশ প্রকাশ (টায়ার অমল) সরকারি পরিবহণ বিআরটিসির কাউন্টারে কর্মরতদের পেটানোর জন্য পরিবহণ শ্রমিকদের নির্দেশ দেন। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা বিআরটিসি কাউন্টারের কর্মীদের মারধর ও কাউন্টারে হামলা করে।

তবে অমল দাশ বলেন, বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে বিআরটিসি বাস চললে আমাদের কোন সমস্যা নাই। তবে তারা গাড়িটি যে সময়ে ছাড়ার কথা ছিল তারা নিয়ম মানে নাই তাই আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সমাধানের পথে যাচ্ছি।

অন্যদিকে, বান্দরবানের শৈলশোভা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, একদিকে বলতে গেলে পূরবী-পূর্বানী গাড়িতে বান্দরবানের মানুষ আর চড়তে চায় না। বিআরটিসি’র গাড়ি ছাড়ার সময় একটু এদিক সেদিক হওয়ার কারণে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক সমিতির মধ্যে প্রশাসনের সাথে কথা হয়েছে আশা করি এ ধরনের সমস্যা আর হবে না।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) দেশের রাষ্ট্রীয় পরিবহন (বিআরটিসি) বান্দরবান-চট্টগ্রাম এর উভয় দিক থেকে তিনটি করে ছয়টি উদ্বোধন করা হয়। গাড়ি উদ্বোধনের পরপরই পূরবী পূর্বাণীর মালিক সমিতির নেতা টায়ার অমলের নেতৃত্বে শুরু হয় বিআরটিসি বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বান্দরবান- চট্টগ্রাম সড়কে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় শৈলশোভা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বান্দরবান পরিবহন মালিক সমিতি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন