খাগড়াছড়িতে ১২ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে নদী, খাল ও ছড়া দখলের অভিযোগ

fec-image

খাগড়াছড়ি জেলা শহরে চলছে নদী, খাল ও ছড়া দখলের মহোৎসব। কিছু চিহিৃত প্রভাবশালী মানুষের দখলবাজিতে শহরে প্রতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙ্গণের ঝুঁকিতে পড়েছে। দখল ঠেকাতে প্রশাসনের কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না থাকায় বিপন্ন হচ্ছে পর্যটন শহর খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং সৌন্দর্য্য।

এদিকে খাগড়াছড়ি শহরে ১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নদী, খাল ও ছড়া দখলের অভিযোগ এনেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতোমধ্যে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা অপসারনের নির্দেশ দিলেও দখলদাররা নিজেদের বৈধ বলে দাবি করে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে তদন্তে যাচ্ছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন খাগড়াছড়ি শহরের নদী, খাল ও ছড়া দখলের মহোৎসব চলে আসছিল। একটি প্রভাবশালী মহল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নির্মাণ করে চলেছে ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। ফলে নদী,খাল ও ছড়া নাব্যতা হারিয়ে বর্ষা মৌসুমে শহরে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সে সাথে তীরবর্তী নিরিহ মানুষ ভাঙ্গণের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ১১ জুলাই খাগড়াছড়ি শহরের নদী, খাল ও ছড়া দখলে ১২টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে চিহিৃত করে তাদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেন। এর প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস গত ১৯ অক্টোবর ১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেন, ২২ অক্টোবরের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা ও ভবন অপসারণ করার জন্য। অপর দিকে নোটিশপ্রাপ্তরা তারা কোন নদী, খাল ও ছড়া দখল করেনি দাবি করে পাল্টা পত্র দেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকা অনুযায়ী খাগড়াছড়ি শহরে অবৈধ দখলদাররা হলেন, চৌধুরী বোডিং-এর মালিক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধ দোস্ত মোহাম্মদ চৌধুরী, নুরুল আলম, হোটেল নুরের ছালেহ আহম্মদ, ডিজিটাল ডায়াগনিস্ট সেন্টারের মালিক আবুল হাসেম, গ্রামীণফোন সেন্টারের মধুসুদন দে, সেলিম ট্রেড সেন্টারের মোহাম্মদ সেলিম, ওয়াল্টন শো রুমের হারুন রশিদ, গাজী হোটেলের গাজী শহীদ, রাজমিস্ত্রী সমবায় সমিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, বাবুল নাগ ও মো: নেছার উদ্দিন।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, এক সময় খাগড়াছড়ি শহরের আশপাশে বহু নদী, খাল ও ছড়া থাকলেও এখন প্রায় অস্থিত্ব নেই। প্রশাসনের কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না থাকার কারণে দখলবাজ দখল করে নিচ্ছে নদী, খাল ও ছড়া। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি নদীতে গাইড ওয়াল নির্মাণ করে নদীর গতি পরিবর্তন করছে, বানাচ্ছে ভবন। এতে বিপন্ন হচ্ছে পর্যটন শহর খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও সৌন্দর্স্য।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র সিংহ জানান, খাগড়াছড়ি শহরে অবৈধ নদী, খাল ও ছড়া দখলে ১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া হলেও তারা তা অপসারণ করেননি। উল্টো তারা নিজেদের বৈধ বলে দাবি করে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাঈদ মোমেন মজুমদার ঘটনাস্থলে যাবেন। এ সময় অভিযুক্তদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি শহরকে বাসযোগ্য করে রাখতে শীঘ্রই নদী, খাল ও ছড়া দখলমুক্ত অভিযান চালানো হোক এ দাবি শহরবাসীর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন