বান্দরবানে নদী ভাঙ্গনের কবলে শতবছরের পুরনো গ্রাম, আতঙ্কে এলাকাবাসী

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় চৈক্ষ্যং খালের তীব্র পানির স্রোতের ফলে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে শতবছরের পুরনো গ্রাম মংচিং হেডম্যান পাড়া । এই বর্ষায় মৌসুমের টানা বৃষ্টিতে ভাঙনের ঝুকিঁতে রয়েছে আরো কয়েকটি বসতঘর। এর আগেও ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকটি ঘরবাড়ি। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের আলীকদমের ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের অবস্থিত শত বছরে পুরনো গ্রাম মংচিং হেডম্যান পাড়া। সেই গ্রামের মানুষের বসবাস ৬০টি পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় ৭ শতাধিক। এর আগেও গ্রামটি ছিল বৃহত্তর আকারে। গেল ২০২০ সালে বর্ষাতে খাল ভাঙ্গনে তলিয়ে গেছে ৫টি বসতঘর এবং চলতি বছরে তলিয়েছে আরো ১টি বসতঘর। এর ফলে চৈক্ষ্যং খালের তিব্র পানি স্রোতের কারণে গ্রামটি সংকুচিত হয়ে বর্তমানে তা বিলীনের পথে। তাই শতবছরের পুরনো পাড়াটি রক্ষার্থে ব্লক বাঁধ নির্মাণে দাবি জানানো হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় শত বছরের পুরনো এই গ্রামটি বছরের পর বছর ভাঙ্গনের কারণে সংকুচিত হয়ে আসছে। এতে বসতবাড়ি হারানোর ভয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। তাছাড়া বর্তমানে যারা বসববাস করছেন তারাও বসতভিটা হারানোর ভয়ে দিনাতিপাত করছেন। তবে এই ভাঙ্গনের অবস্থা বিভিন্ন কর্মকর্তা পরিদর্শন করে গেলেও মেলেনি কোন সুরাহা। এছাড়াও সমস্যার প্রতিকার চেয়েও এখনো সমাধান মেলেনি বলে অভিযোগ তাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামটি ঘেঁষে রয়েছে চৈক্ষ্যং খাল। খালটি সরু এসে বাঁক দিয়ে বয়ে গেছে খালের পানি। বর্ষায় খালের তীব্র পানির স্রোতের ধাক্কায় ভেঙ্গে গেছে ব্যবহৃত সিড়ি ও পড়ে গেছে পুরনো গাছ। এর আগেও বিলীন গেছে কয়েকটি ঘরবাড়ি। তাছাড়া খালের কিনারে কয়েকটি বসতঘর এখন ভাঙ্গনের মুখে। টানা বৃষ্টি হলে ভাঙ্গনের আতঙ্কে থাকেন খালের কিনারে থাকা পরিবার। অসংখ্য মানুষ নিয়ে গড়ে উঠা শতবছরের পুরনো গ্রামটি বছরের পর বছর সংকুচিত হয়ে আসছে। তাই সমস্যা-সমাধানের দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে মুছে যাবে পাড়ার চিহ্ন ও হারিয়ে যাবে বহু বছরে আগে গড়ে তোলা মানুষগুলো।

মংচিং হেডম্যান পাড়া গ্রাম প্রধান (কারবারি) অংশৈপ্রু মারমা বলেন, এই গ্রামে আগে কয়েকশো পরিবার বসবাস করতো। কিন্তু খাল ভাঙ্গনের কারণে কয়েকটি বসতঘর তলিয়ে গেছে। আরো কয়েকটি বাড়ি ভাঙ্গনের কবলে। প্রশাসন বহুবার পরিদর্শন করে গেছেন। কোন প্রতিকার পাইনি। তাই প্রশাসনের কাছে দ্রুত সমস্যা সমাধানের সহযোগিতা চেয়েছেন।

চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, চৈক্ষ্যং খালের প্রবল স্রোতের কারণের প্রতি বছর মংচিং হেডম্যান মার্মা পাড়াটি খাল ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। পাড়াটিকে রক্ষা করতে হলে বড় বাজেটের প্রয়োজন। তবে চেষ্টা করছি প্রশাসনের মাধ্যমে কোন সমাধান আনা যায় কিনা।

বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুপ চক্রবর্তী বলেন, আলীকদমে মংচাই গ্রামে নদীর ভাঙ্গনে ব্যাপারে স্থানীয়রা অবগত করেছেন। আর এই বিষয়টি নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় উঠে এসেছে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সেই ভাঙ্গনের পরিদর্শন করে মেজারম্যান্ট করেছেন। এই মেজারম্যান্টের উপর ভিত্তি করে আমরা বরাদ্দ চাইবো। তবে জরুরি ভিত্তিতে এই জায়গায় ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না সে ব্যাপারে যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নির্দেশ দেয় তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন