ভাসানচরে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা

fec-image

‘নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরের দেখভালসহ সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে জাতিসংঘ। এখন কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর হতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ, ভাসানচর আশ্রয়শিবিরটি কক্সবাজার ক্যাম্পের তুলনায় অনেক নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত, সুযোগ-সুবিধাও বেশি।’

এই মত কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের (৫৫)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় রোহিঙ্গা নাগরিক কামালের সঙ্গে। এ সময় তাঁর আশপাশে দাঁড়ানো ছিল ১০-১২ জন রোহিঙ্গা। তাঁদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম, মো. আলম, দিল মোহাম্মদ রোহিঙ্গা কামাল উদ্দিনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে বলেন, সুযোগ পেলে তাঁরাও ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক। কারণ, কক্সবাজারের ক্যাম্পে পানির সংকট, বসতিও পাহাড়ের ঢালুতে।

ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুতুপালং ক্যাম্পের সামনে কয়েক শ রোহিঙ্গা ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করে। কেউ কেউ ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করে। ব্যানারে ইংরেজিতে লেখা আছে, ‘ওয়েলকাম ইউএন, ওয়েলকাম ইউএনএইচসিআর, থ্যাংক ইউ ইউএন (স্বাগতম জাতিসংঘ, স্বাগতম ইউএনএইচসিআর, ধন্যবাদ জাতিসংঘ)।’

কুতুপালং ক্যাম্প (নিবন্ধিত) ইনচার্জ মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে কাজ করা নিয়ে সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের চুক্তি হয়েছে। এতে খুশি হয়ে কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা আনন্দ মিছিল, মানববন্ধন করেছে। উদ্দেশ্য—কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও ধন্যবাদ জানানো।

কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, বালুখালী, টেকনাফের শালবন, জাদিমুরা, নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে রোহিঙ্গারা। তাদের কেউ কেউ ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তরে রাজি বলে মত প্রকাশ করে।

বালুখালী ক্যাম্পের মাঝি নাজির হোসেন বলেন, করোনা মহামারির শুরুর পর থেকে টানা দুই বছর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত নিষিদ্ধ ছিল। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে অস্ত্রধারীদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ মিছিল করতে চেয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আজ ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘকে অভিনন্দন জানিয়ে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ক্যাম্পে আনন্দ মিছিল করতে পারছে, তাদের ভালো লাগছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখ রোহিঙ্গা। তার আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারের ঘনবসতির কয়েকটি ক্যাম্পের ঝুঁকি কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার ধারণক্ষমতার আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়।

গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া শুরু হয়। বর্তমানে ভাসানচরে অবস্থান করছে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে স্থানান্তরিত ১৩ হাজার ৭২৩ রোহিঙ্গা। কিন্তু ভাসানচরে নিরাপত্তা নেই, এমন অজুহাত তুলে কিছু রোহিঙ্গা পালানোর সময় ধরাও পড়ছে। এখন ভাসানচরের দায়িত্ব জাতিসংঘ ও ইউএনএইচসিআর গ্রহণ করায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন