ভাসানচরে নয়, স্বদেশে ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গারা

fec-image

মিয়ানমার সেনাদের জাতিগত নিধনের হাত থেকে রেহাই পেতে ৮ লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে। প্রচণ্ড গরম ও গিজগিজে পরিবেশ সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা মনে করছে এখানে ভাল আছে। পূর্ণ নাগরিকত্ব নিয়ে স্বদেশে ফিরে যেতে চায় তারা। কিন্তু কোন অবস্থাতে তারা ভাসানচরে অথবা অন্য কোথাও যাবে না। কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হলে তারা এসব জানান।

২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৬ মাস ধরে রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে। তারা সরকারি ও বিভিন্ন দাতার সংস্থা থেকে ত্রাণ সামগ্রীসহ স্যানিটেশন ও পয়নিষ্কাশনসহ ওষুধ সামগ্রী যথা সময়ে সরবরাহ পাচ্ছে।

কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান রশিদ আহম্মদ জানান, উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পের যেসব রোহিঙ্গা বসবাস করছে তাদের অনেকেই মিয়ানমারের স্বজনদের বাড়িতে রয়ে গেছে। তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছে। নীতিগতভাবে প্রত্যাবাসন শুরু হলে রোহিঙ্গারা বানের পানির মত মিয়ানমারে ফিরতে শুরু করবে। তিনি জানান, এখানকার চাইতে ভাষানচরে অনেক উন্নত জীবন যাপন করতে পারবেন।

সেখানে চলে গেলে কি হয় এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা নেতা ফয়সাল আনোয়ার জানান, ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিষয়টি জানা জানি হলে অনেকে ক্যাম্প ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা খেয়ে অনেক রোহিঙ্গাকে আবার ক্যাম্পে ফিরে আসতে হয়েছে। তারাই বলছে, ভাসানচরে তারা কোন অবস্থাতেই যাবে না। হয় এখানে মরবে নতুবা পূর্ণ নাগরিকত্ব নিয়ে স্বদেশে ফিরে যাবে।

কুতুপালং ক্যাম্প ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সেক্রেটারি মো. নুর জানান, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ও চলতি বছরের ২২ আগস্ট ২ দফা প্রত্যাবাসনের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও প্রত্যাবাসন না হওয়ার রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়া যে একটা অনুভূতি তা প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। এখন ভাসানচরে যাওয়ার কথা বললে কোন রোহিঙ্গা রাজি হবে না। তাছাড়া বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ভাসানচরে না যেতে রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিচ্ছে। তাই ভাসানচরে যাওয়া না যাওয়ার এখতিয়ার রোহিঙ্গাদের উপর নির্ভর করছে বলে ঐ নেতা দাবি করেন।

গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার ও উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সরওয়ার আলম শাহীনের সঙ্গে আলাপ করা হলে তারা বলেন, প্রথম দিকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলে আসছিল। সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. আব্দুল মোমেন বেইজিং সফর শেষে প্রত্যাবাসন নিয়ে দ্বিপক্ষীয় একটি কমিটি হলেও মিয়ানমার আগের কমিটি বহাল রাখার পক্ষে অবলম্বন করছেন। তাই ইতিমধ্যে প্রত্যাবাসন নিয়ে নিশ্চিত কোন ধারণা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সরকার মনে করছে গিজগিজে পরিবেশ থেকে লাখ খানেক রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করলে তাদের জন্য নিরাপদ বসবাস উপযোগীসহ নানা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কিছু কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যাপারে রাজি হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে তাদেরকে স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বছরের শেষের দিকে রোহিঙ্গারা যদি স্বেচ্ছায় যেতে চায় তাহলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন