‘ভাসানচরে স্থানান্তর সমর্থন না করলে বাংলাদেশ জাতিসংঘকে সহযোগিতা করবে না’

fec-image

ভাসানচরে স্থানান্তরের সরকারের উদ্যোগকে সমর্থন না করলে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করবে না বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠকে (এনটিএফ) পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন জাতিসংঘকে।

২০২০ সালে রোহিঙ্গাদের সহায়তা খরচ মেটানোর জন্য জাতিসংঘ ৮৮ কোটি ডলারের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) তৈরি করছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জেনেভাতে এই তহবিল সংগ্রহের জন্য সবার কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করার কথা আছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জেআরপিতে কী কী বিষয় থাকবে সে বিষয়ে আজকে (বৃহস্পতিবার) একটি প্রেজেন্টেশন দেয় জাতিসংঘ। ওই প্রেজেন্টেশনে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, ভালো জীবনযাপনের ব্যবস্থা ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণকে সহায়তার বিষয়গুলো উল্লেখ থাকলেও ভাষানচরের বিষয়টি না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র সচিব বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ভাসানচরের বিষয়টি জেআরপির ভেতরের অংশে উল্লেখ করা হয়েছে জানানো হলে এটিকে সামনে নিয়ে আসার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র সচিব।’

জেনেভাতে তহবিল সংগ্রহের আগে জাতিসংঘ গোটা জেআরপি বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এবারের জেআরপিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যা হয়েছে সেটির প্রতিফলন না থাকলে তহবিল সংগ্রহে অংশগ্রহণ করবে না সরকার।’

এর আগে, ২০১৮ সালে ৯৫ কোটি ডলারের এবং ২০১৯-এর জন্য ৯২ কোটি ডলারের জেআরপি ঘোষণা করা হলে ৬৯ ও ৬৭ শতাংশ তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। উভয় জেআরপি ঘোষণার অনুষ্ঠানে জেনেভাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তহবিল সংগ্রহে জাতিসংঘকে সহায়তা করেছেন।

প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে ভাষানচরে স্থাপনা তৈরি করেছে সরকার। স্থানান্তরের বিষয়ে জাতিসংঘ সরাসরি বিরোধিতা না করলেও অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী এবারের জেআরপি আগের দুই বছরের থেকে কম হবে।’ জাতিসংঘের নিয়ম হচ্ছে যত বছর অতিবাহিত হবে সহায়তার পরিমাণ তত কমতে থাকবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এবারের জেআরপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে খাদ্য সহায়তা এবং এর পরে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায়।

রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা

রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা নিয়ে আলোচনায় ইউনসেফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কক্সবাজারে তিন হাজার ২০০ লার্নিং সেন্টারে তিন লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু শিক্ষা গ্রহণ করছে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকে বলে থাকে রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষা পাচ্ছে না। বিষয়টি সঠিক নয়। ওইসব লার্নিং সেন্টারে ইংরেজি, অংক, বিজ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির শিক্ষা দেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি লার্নিং সেন্টারে একজন রোহিঙ্গা শিক্ষক আছেন। এছাড়া তাকে সহায়তা করার জন্য একজন বাংলাদেশি শিক্ষক আছেন। রোহিঙ্গা শিশুদের বার্মিজ ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়।’

গাম্বিয়া-মিয়ানমার মামলা

বৃহস্পতিবারের এনটিএফ বৈঠকে গাম্বিয়া-মিয়ানমার মামলা বিষয়ে সবাইকে অবহিত করেন পররাষ্ট্র সচিব। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে একটি অন্তবর্তীকালীন আদেশ প্রদান করবে।

বৈঠকে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বরাষ্ট্র, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জাতিসংঘ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভাসানচর
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন