মামলার প্রতিবেদন দিতে আবারও সময় চাইলো পিবিআই

fec-image

সিনহা হত্যা মামলায় বরখাস্ত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ২৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের দায়েরকৃত মামলার প্রতিবেদন দাখিলে আবারও ৩০ দিন সময় চেয়েছে পিবিআই।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেরিন সুলতানার আদালতে হাজির হয়ে সময়ের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইন্সপেক্টর কায়সার হামিদ। আদালত শুনানি শেষে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। তার আগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ৩০ দিন সময় চেয়েছিল পিবিআই। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।

বাদীর প্রধান আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল মন্নান বলেন, যে কোনো মামলা তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা হলে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয়। আলামত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তী ধার্য তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবেন।

এদিকে, সিনহার হত্যা মামলায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপের হাতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৬ মিথ্যা মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি।

সাজানো মামলায় টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর জামিনে এসে প্রদীপ গংয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত তার ফৌজদারি মামলাটিও আদৌ রেকর্ড হয়নি।

ফলে একদিকে নিজের মিথ্যা মামলা অপরদিকে মামলা-হামলায় জড়িতদের শাস্তি ও ন্যায় বিচারের দাবিতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দৈনিক কক্সবাজারবাণী ও জনতারবাণীর সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফা খান।

তিনি অভিযোগ করেছেন, মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদ পত্র সম্পাদক পরিষদ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছেন দীর্ঘ দিন হচ্ছে।

যার রিসিভ কপি তাদের কাছে আছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা।

এই অবস্থায় নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা নিজের সকল মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে তার দায়েরকৃত মামলা আমলে নিয়ে আসামিদের আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিচার বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি বলেন, মাদক ও ঘুষের বিরুদ্ধে লিখেছি বলে প্রদীপ ও তার লালিত মাদকব্যাবসায়ায়ীরা পাষবিক নির্যাতন করছে।

৬টি মিথ্যা মামলা দিয়ে টানা ১১ মাস কারাগারে রেখেছে। আমি বর্তমানে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক বিপর্যয়ে আছি। এই মামলা চালাতে পারছিনা আর। কাজেই এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হলে বিনা অপরাধে আমার সাজা হবে। আর তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছি তা রেকর্ড না হওয়া মানে অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া। এতে করে দেশের বিচার ব্যবস্থা,ন্যায় বিচার ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অতএব এ ব্যাপারে সকলের আন্তরিক সহায়তা প্রয়োজন।

সূত্রমতে, চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি দায়ের করেছিলেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। যার নং সিআর ৬৬৬/২০২০ সদর। মূলত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান কর্তৃক প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল জনতার বাণীতে ২০১৯ সালের ২৪ জুন ‘টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফের ওসি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ওসি প্রদীপের রোষানলে পড়েন ফরিদুল মোস্তফা।

একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থানার ওসি থাকাকালে প্রদীপ কুমার দাশ সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে রাতের অন্ধকারে ঢাকার মিরপুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান টেকনাফ থানায়। পরে চালানো হয় অমানবিক বর্বরতা ও নির্মম নির্যাতন। কয়েক দিন ধারাবাহিক নির্যাতন শেষে অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজিসহ পৃথক ৬টি মামলা দিয়ে চালান দেয়া হয়। এসব মামলায় সাংবাদিক ফরিদ টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর চলতি বছরের ২৭ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান।

একপর্যায়ে তিনি শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে প্রধান আসামি করে ২৬ পুলিশ সদস্য এবং ৪ জন মাদক ব্যবসায়ীসহ মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন সদর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ।

পিবিআইর প্রতিবেদন দিতে প্রথম সময়ের দরখাস্তের পরবর্তী ধার্য তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও আদালতে আবারও ৩০ দিন সময় চাওয়ার কারণে মামলার বাদীসহ কর্তব্যরত সাংবাদিকরা এ মামলার ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাংবাদিক ফরিদ।

এদিকে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় তার বোনের দায়ের করা মামলায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পিবিআই, মামলার প্রতিবেদন, সাজানো মামলা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন