মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থান: সামরিক নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো যুক্তরাষ্ট্র
মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্বাহী আদেশকে অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় সামরিক নেতারা ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসাও পড়বে।
এছাড়া এই পদক্ষেপের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সরকারের এক বিলিয়ন তহবিলেও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাত দেয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হল।
রাজধানী নেপিডোতে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার সময় এক নারী মাথায় গুলি লাগার পর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার সময়ে এই নিষেধাজ্ঞা এলো।
মিয়া ঠয়ে ঠয়ে খাইং নামে ওই নারী মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের জলকামান, রাবার বুলেট এবং গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার সময় আহত হন।
সম্প্রতি দেশটিতে গণজমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং রাতে কারফিউ জারি থাকলেও গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।
পুলিশ শক্তি ব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ার পর আরো গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এখনো কারো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি বার্মা নামেও পরিচিত।
মি. বাইডেন কী চাইছেন?
মি. বাইডেন সেনা অভ্যুত্থান বাতিল করে অং সান সু চি’সহ বেসামরিক নেতাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
দরকার হলে আরো পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, “বার্মার মানুষ তাদের আওয়াজ তুলছে এবং পুরো বিশ্ব তা দেখছে।”
“বিক্ষোভ বাড়ার সাথে সাথে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চাকারীদের উপর সহিংসতা বাড়াটা অগ্রহণযোগ্য এবং আমরা এটি চ্যালেঞ্জ করেই যাবো,” তিনি বলেন।
তিনি বলেন, তার প্রশাসন চলতি সপ্তাহেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় প্রথম দিকে কারা কারা থাকবেন তাদের নির্ধারণ করবে। যদিও মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের কারণে এরই মধ্যে মিয়ানমারের কিছু সামরিক নেতা কালো তালিকাভুক্ত রয়েছেন।
“আমরা রপ্তানিতেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে যাচ্ছি। মার্কিন যেসব সম্পদ বার্মিজ সরকারকে সুবিধা দেয় সেগুলো জব্দ করবো, তবে স্বাস্থ্য সেবা, সুশীল সমাজের সদস্য এবং যারা বার্মার জনগণকে সরাসরি সহায়তা তাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত থাকবে,” তিনি বলেন।
এর মধ্য দিয়ে গত মাসে ক্ষমতায় আসার পর মি. বাইডেন প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন।
মিয়ানমারের সর্বশেষ অবস্থা কী?
চলমান বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মধ্যেই সামরিক বাহিনী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং আরো বেশি মানুষকে গ্রেফতার করছে।
সম্প্রতি যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনে কর্মরত ব্যক্তি যারা সামরিক বাহিনীর আনা ভোট জালিয়াতির অভিযোগের পক্ষে সমর্থন জানাতে অসম্মতি জানিয়েছিল। নভেম্বরের ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় সু চি’র দল এনএলডি।
এদিকে মিয়া ঠয়ে ঠয়ে খাইং এখনো রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আজ তার বয়স ২০ বছর পূর্ণ হচ্ছে।
তার বোন মিয়া থা টো নয়ে যিনিও ওই বিক্ষোভে ছিলেন তিনি জানান যে, তার বোনের সেরে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
“এটা হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়ার মতো,” তিনি বলেন। “আমাদের শুধু মা আছেন। বাবা আগেই মারা গেছেন।”
“চার ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার বড়। ও সবার ছোট। আমি মাকে বোঝাতে পারছি না। আমাদের কোন ভাষা নেই।”
এর আগে ১৯৮৮ এবং ২০০৭ সালে দেশটির দশকব্যাপী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
১৯৮৮ সালের বিক্ষোভে কমপক্ষে ৩,০০০ বিক্ষোভকারী মারা যায় এবং ২০০৭ সালে ৩০ জন মারা গিয়েছিল। দুই ঘটনাতেই হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
মানুষ কেন বিক্ষোভ করছে?
সাধারণ নির্বাচনের পর এনএলডি পার্টি বিপুল ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর গত পহেলা ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নেয় সামরিক বাহিনী।
সামরিক বাহিনী বিরোধী একটি দলকে সমর্থন দিচ্ছে যারা নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
মিজ সু চি গৃহবন্দী রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ওয়াকি-টকি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এনএলডির আরো অনেক নেতাও আটক রয়েছেন।