মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সম্মানহানি ঘটেছে, বলেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

fec-image

মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং ও আরও তিন সেনা কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন।

মঙ্গলবার রাতে জারি করা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্যরা হলেন ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এই কর্মকর্তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যদি তাদের ব্যক্তি মালিকানায় কোন সম্পদ থাকে সেগুলো সব জব্দ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর সংশ্লিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারবে না তারা।

নিষেধাজ্ঞার ওই ঘোষণায় মিয়ানমারের পরিবর্তে ‘বার্মা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও বলেন, তারাই প্রথম কোন দেশ যে কিনা বার্মিজ সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে নির্বিচারে হত্যা ও সহিংসতার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দুই বছর আগের সেই সহিংসতার যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় সেনাপ্রধান মিন অং লায়িংসহ অন্য কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে৷

রোহিঙ্গাদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সৈন্যদের মুক্তির বিষয়টিও বিবৃতিতে উঠে এসেছে৷ সেনাপ্রধান মিন অং লায়িং-এর নির্দেশে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়৷ এই ঘটনা ‘সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাবের একটি গুরুতর উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷

এই নিষেধাজ্ঞা পুরো সামরিক বাহিনীর উপর একটি আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র৷

তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান, যা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত বিভিন্ন আদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নয়, এটা পুরো সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা৷

তবে তিনি ইরাবতী পত্রিকাকে বলেন, মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন না। তাদের সেখানে যাওয়ার দরকারও নেই। ফলে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে কিনা সেই প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু এটা সেনাবাহিনীর সম্মানহানি করেছে।

জ মিন তুন বলেন, বিভিন্ন দেশ বা যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করেছি এবং আমরা যা করছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তার প্রতি সম্মান দেখানো।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আয়োজনে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের প্রথম দিনে যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘোষণা দেয়। সম্মেলনে মাইক পম্পেও ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে অচলাবস্থা দেখা দেয়ায় গত মাসে কংগ্রেসের এক শুনানিতে এশিয়া-প্যাসিফিক সাব কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস সদস্য ব্রাডলি শেরম্যান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব করেন।

থাইনিয়াং ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক উ থেইন ও বলেন যে, এখন যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক কঠোর নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করেছে মিয়ানমার।

তিনি বলেন, ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তার প্রভাব হবে সীমিত।

পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখলেও দেশটি চীনের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে আসছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সম্প্রতি ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন অভিযান চালানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক ধাপে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে এই রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের মিশন এর আগে জানিয়েছে যে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা বন্ধে যদি আরও আগে পদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে এই বার্মিজ সেনাদের দুই বছর আগেই দোষী সাব্যস্ত করা যেত।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন