মিয়ানমারে নির্বাচনী তৎপরতার সাথে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত সংখ্যাও
মিয়ানমারে বড় শহরগুলোতে লকডাউন চলছে, কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে, প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০০ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মৃতের হার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। সব মিলিয়ে মিয়ানমারের চিত্রটা এখন অন্ধকার।
এরপরও স্টেট কাউন্সিলর এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি বলেছেন, ৮ নভেম্বরের নির্বাচন এমনকি মহামারী মোকাবেলার জন্যও আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
একটা যুক্তি হলো নির্বাচন বিলম্বিত হলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে এবং সামরিক বাহিনী আবার সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে।
এই বিতর্কটার অবশ্য তেমন গুরুত্ব নেই এখন, কারণ এমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না যে, নির্বাচন স্থগিত করা হবে, তা পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন।
নির্বাচন কমিশন দেশের বাইরের ব্যালট সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার তারা নেপিদো হাই স্কুলে ভোটের মহড়া চালিয়েছে। পুরো ফেস মাস্ক পড়ে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে, তাপমাত্রা মেপে এবং ভোটারদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে তারা এই মহড়া চালিয়েছে।
বিশ্লেষকরা অবশ্য বলেছেন যে, এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা সারা দেশের সব জায়গায় করা যাবে কি না, সেটা এখনও দেখার বিষয়।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য সেন্সর করার কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে কমিশন। এতে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, বাস্তব পরিস্থিতি ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) দিকে অনেকটাই ঝুঁকে আছে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে রেডিও ও টেলিভিশনে ১৫ মিনিট করে সম্প্রসারের স্লট দেয়া হয়েছে।
কিন্তু পিপলস পার্টির প্রধান গণতান্ত্রিক অ্যাক্টিভিস্ট কো কোগাই রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেছেন যে, কমিশন তাদের বক্তৃতার একটা অংশ বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, ব্যাংকের উচ্চ সুদের হারের কারণে স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করতে পারছেন না।
জাতিগত চিন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি বলেছে, তারা পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে জাতিগত বামার সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমান প্রতিনিধিত্বের যে দাবি জানিয়েছিল, কমিশন সেটা সেন্সরের চেষ্টা করেছে।
প্রতিবাদে দুই দলই রাষ্ট্রীয় মিডিয়া থেকে তাদের সম্প্রচার প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভোটের উপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখা হবে, যারা জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। ২০১৫ সালে এনএলডির সাথে মিলে নির্বাচন করেছিল, এমন বেশ কিছু জাতিগত দল এবার আলাদা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সালউইন ইন্সটিটিউট ফর পাবলিক পলিসির ডেপুটি ডিরেক্টর মিস ইং লাও বলেন, “এই দলগুলোর জন্য গৃহযুদ্ধ, কেন্দ্রীয় সরকার ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়গুলো প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়”।
তিনি স্ট্রেইট টাইমসকে বলেন, “কিছু মূল বিষয় রয়েছে, যেগুলোর ভিত্তিতে জাতিগত রাজনৈতিক দলগুলো দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে এগুলো নিয়ে কথা বলতে না বলার অর্থ হলো, তাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা”।
নিউ মিয়ানমার ফাউন্ডেশানের নির্বাহী পরিচালক মিস মিয়া নান্দার থিন বলেন, জনসমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে।
তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পিপলস অ্যালায়েন্স ফর ক্রেডিবল ইলেকশান্সের নির্বাহী পরিচালক মি ইয়ে কিয়াউ সোয়ারমাইন্ত বলেন, এই ভোট যে নিরাপদ কমিশন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারলে ভোটারদের উপস্থিতি হবে অনেক কম।
সূত্র: দ্য স্ট্রেইট টাইমস