“কাচিনের মিতকিনা শহরে মিয়ানমারের গোয়েন্দারা দুইজন পুরুষকে জোরপূর্বক নগ্ন করে পরষ্পরকে ধর্ষণ করতে বাধ্য করেছে। এই দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে তারা প্রশ্ন করে, ‘তোমরা উপভোগ করছো তো?’”

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর যৌন সহিংসতার শিকার সংখ্যালঘুরা: জাতিসংঘ

fec-image

মিয়ানমারে কাচিন ও শান রাজ্যে সেনাসদস্যরা সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর জনগণের ওপর যৌন সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে দেশটিতে কাজ করা জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

২০১৬ সালে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে ক্ষমতায় আসে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার। জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠী, সামরিক ও বেসামরিক সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন তিনি। তবে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইনের পশ্চিমাঞ্চল, শান রাজ্য ও উত্তরের কাচিন রাজ্যে জাতিগত সংঘাত বেড়েই চলেছে। এছাড়া ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। সু চিও তার ভূমিকার জন্য বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হয়েছেন। হারিয়েছেন বিভিন্ন পদক আর সম্মাননা।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনা সদস্যরা নিয়মিতই কাঠামোবদ্ধভাবে ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং নারী , পুরুষ, রুপান্তরকামীদের বিরুদ্ধে অন্যান্য যৌন সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন ও শান রাজ্য এবং পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার শত শত মানুষের সাক্ষাতকার নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর যৌন সহিংসতা ‘ বেসামরিকদের সাজা দিতে এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে একটি ইচ্ছাকৃত, পূর্ব পরিকল্পিত কৌশল।’

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য রাধিকা কুমারাসামি বলেন, `রোহিঙ্গাদের গণহত্যার মাধ্যমে তারা ধ্বংস করতে চেয়েছিলো এবং তাদের পালাতে বাধ্য করেছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও কিশোরীদের কাঠামোবদ্ধ হত্যা ও ধর্ষণ, গর্ভবতী নারীদের ধর্ষণ, শিশুদের ওপর হামলা, জননাঙ্গে আঘাত, স্পর্শকাতর স্থানে হামলা ও তার প্রদর্শন করেছে। এছাড়াও নারীদের এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে যেন তারা স্বামীদের সঙ্গে সহবাস করতে না পারে এবং সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পড়ে।

বেশিরভাগ আক্রমণই ছিলো নারী ও কিশোরীদের ওপর। তাদের সিগারেটের আগুনে পোড়ানো হয়েছে, ছুরি দিয়ে কাটা হয়েছে এবং সামরিক ঘাঁটিতে বেশ কয়েকজনকে যৌনদাসী করেও রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে পুরুষদের ওপরও ধর্ষণ, জোরপূর্বক নগ্ন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

মিশনের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার সিদোতি বলেন, প্রথমবারের মতো কোনও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আমরা স্পষ্টভাবে রুপান্তরিত মানুষদের সহিংসতার শিকার হওয়ার ব্যাপারটি তুলে ধরেছি। আমরা রুপান্তরিত নারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন যে তারা দুইবার সহিংসতার শিকার হয়েছেন কারণ তারা একইসঙ্গে রোহিঙ্গা এবং তৃতীয় লিঙ্গের।

কাচিনের মিতকিনা শহরে মিয়ানমারের গোয়েন্দারা দুইজন পুরুষকে জোরপূর্বক নগ্ন করে পরষ্পরকে ধর্ষণ করতে বাধ্য করেছে। এই দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে তারা প্রশ্ন করে, ‘তোমরা উপভোগ করছো তো?’

জাতিসংঘ মিশন জানায়, ২০১৮ সালে মানবাধিকার পরিষদে দেওয়া প্রতিবেদনটি তারা নিজে থেকেই আরও সংযোজন করতে চেয়েছে যেন অন্যায়কারীরা সাজা পায়। তারা জানায়, এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কুমারাসামী বলেন, এখনও তাদের ফিরে আসার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, তারা যে কোথায় ফিরে যাবে তাও নিশ্চিত নয়। গ্রামগুলোর স্যাটেলাইট ছবি থেকে দেখা যায় সেখানে অল্প কিছু বাড়ি রয়েছে। তারা যে নিজেদের গ্রামে ফিরতে পারবে না তা নিশ্চিত।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জাতিসংঘ, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর, যৌন সহিংসতার শিকার সংখ্যালঘুরা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন