যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ তুষারঝড়ে ১২ জনের মৃত্যু, জরুরি অবস্থা ঘোষণা

fec-image

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় দ্রুত কমছে তাপমাত্রা। শক্তিশালী আর্কটিক ঝড়ের কারণে বড়দিনের ছুটিতেও আবহাওয়া সতর্কতার মুখে রয়েছে ১৩ কোটির বেশি মানুষ। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এলাকাজুড়ে বয়ে যাওয়া তুষারঝড়ে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে; সেই সঙ্গে ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ২০ কোটি মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের (এনডব্লিউএস) বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার দিনজুড়ে যে তুষারঝড় বয়ে গেছে— তার ব্যাপ্তি ছিল দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য টেক্সাস থেকে সর্বউত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য মাইন পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি। এ ঝড়কে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনডব্লিউএস।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, তাপমাত্রা এত কমে গেছে যে অনাবৃত ত্বকে ৫-১০ মিনিটের মধ্যে তুষারপাত স্পর্শে প্রদাহ (ফ্রস্টবাইট) হতে পারে। ঝড়ে তীব্রতায় প্রধান প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই শৈত্যপ্রবাহের কারণে এবারের বড়দিনে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তুষার জমতে পারে।

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস) জানিয়েছে, দেশের কিছু অংশে এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪৫ থেকে ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডেস মোনেসের মতো বড় মেট্রো শহরেরও, ফ্রস্টবাইট বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের ব্রিফিংয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এটি ছোটবেলায় দেখা সাধারণ তুষার দিনের মতো নয়, এটি খুবই গুরুতর পরিস্থিতি।

আর্কটিক বায়ু প্রবাহ টেক্সাসের এল পাসোতে তাপমাত্রা মাইনাস ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে পারে, একই সঙ্গে তীব্র বাতাস বয়ে আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফ্লোরিডা ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ঠান্ডা বড়দিন দেখতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এনডব্লিউএস একে ‘প্রতি প্রজন্মে একবার’ ঘটে, এমন একটি শীতকালীন আবহাওয়া পরিস্থিতি বলে অভিহিত করেছে।

বৃহস্পতিবার তারা জানায়, শুক্রবার ‘জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই শীতল বাতাস পূর্ব উপকূলে আঘাত হানতে পারে’।

তুষারপাত এবং প্রবল ঝড়ো বাতাস মধ্য-পশ্চিম এবং কানাডায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, নিউ ইয়র্ক, জর্জিয়া এবং ওকলাহোমা রাজ্যের গভর্নররা নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আবহাওয়ার কারণে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্য ‘জ্বালানি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে। মেরিল্যান্ডে, ঝড়ের আগেই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অন্যরা ওয়ার্মিং শেল্টার বা উষ্ণায়ন আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে।

ফ্লাইট-ট্র্যাকিং একটি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার ৩০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়ে গিয়েছে। ভ্রমণে বিঘ্ন ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায়, ইউনাইটেড, ডেল্টা এবং আমেরিকানসহ প্রধান এয়ারলাইন্সগুলো তাদের ফ্লাইট রি-শিডিউল করতে ইচ্ছুক যাত্রীদের জন্য ফি মওকুফ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

ভারী কুয়াশার কারণে কিছু দৃশ্যমান না হওয়ায় বুধবার কলোরাডো-ওয়াইওমিং সীমান্তের রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন