কলাতলীতে অবৈধ গাড়ি পার্কিং

যুবলীগ নেতা ও ট্রাফিক পুলিশের নামে চাঁদাবাজি

fec-image

কক্সবাজার শহরের কলাতলীর ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ গাড়ি পার্কিং। চলছে যুবলীগ নেতা ও ট্রাফিক পুলিশের নামে চাঁদাবাজি। পৌরসভা ও মালিক সমিতির জন্যও চাঁদা গুনতে হয়। মূল সড়কের দুই পাশে যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা। মাসখানেক আগে কলাতলীর মোডে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর আগে একই স্থানে দুর্ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, পথচারী, আইনজীবীসহ ৬ জন মারা যায়। ফুটপাতে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে এসব দুঘটনা ঘটছে।

কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে ঢোকার পথে দেখা যাবে অসংখ্য ছোট কার, মিনিবাস ও সিএনজি। যেগুলো মূল সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে আছে। যে কারণে খালি পায়ে হাঁটাচলাও দায়।

এ বিষয়ে মমতাজ মিয়া (বাবুল) নামক একজন গাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, প্রতি গাড়িতে কক্সবাজারে ২৩০ টাকা এবং টেকনাফ ২৩০ টাকাসহ মোট ৪৬০ টাকা দিতে হয়। সেখানে ৪০০ টাকার কোন রশিদ দেয় না।

তিনি বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ একটি গাড়ি আসা-যাওয়া ভাড়া পড়ে ২৪০০ টাকা। সেখান থেকে গ্যাস খরচ ১০০০, চাঁদার টাকা ৪৬০ টাকা ও চালকের বেতন ৫০০ টাকা চলে যায়। অবশিষ্ট থাকে ৪০০ টাকার মতো। এ টাকায় কি সংসার চলে?

অন্যান্য চালকরা জানিয়েছে, প্রতি মাসে টেকনাফে পুলিশের নামে ১০০০ এবং কক্সবাজারে ৭০০ টাকা দিতে হয়। যারা এই টাকা দেয় না তাদের গাড়ি চলাচলের সুযোগ নেই।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল, এসব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি সিন্ডিকেট, যারা ট্রাফিক পুলিশ, মালিক সমিতি, কক্সবাজার পৌরসভা ও সরকার দলীয় নেতাদের নামে প্রতিটি গাড়ি থেকে চাঁদা উত্তোলন করে। সরেজমিন গিয়ে কথা বলে তার কিছুটা সত্যতা মিলেছে।

দেখা গেল, ৪ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ছোট কিছু কার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কলাতলী রাস্তার মোড়ে। এসব গাড়ি যায় সরাসরি টেকনাফ। প্রতি যাত্রী থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা ভাড়া।

জানা গেছে, গাড়ি প্রতি নেওয়া হয় ৪০০ টাকা চাঁদা। তার বাইরে কক্সবাজার পৌরসভার টোলের নামে ৩০ টাকার একটি রশিদও ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে চালকদের। আসা-যাওয়া মিলে গাড়িপ্রতি ৪৬০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, এসব টাকা কার পকেটে যায়? কলাকলীতে পৌরসভার গাড়ি পার্কিং এর নামে কোন ইজারা নেই। তবু চাঁদা নেওয়া হচ্ছে কেন?

এসব প্রশ্ন জানতে রশিদ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। পরিচয় জানতে চাইলে সঠিক তথ্য দেননি। অনেক ভনিতা করে কথা বলেন। এড়িয়ে চলতে চান প্রতিবেদকের প্রশ্ন। পরে জানা গেল, তার নাম বেলাল। পরে মুঠোফোনে তার সঙ্গে কথা হয়। লাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, মালিক সমিতির সভাপতি বাহার মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক জহির। লাইনের মালিক বাহাদুর। টেকনাফে দেখাশোনা করেন নুরুল আলম চেয়ারম্যান। লাইন পরিচালনা, চাঁদা আদায় সংক্রান্তে জানতে বাহার মোল্লা মুঠোফোনে (০১৬১৫…৬৪২) কল দিলে রিসিভ করেননি।

সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক পুলিশ) রকিব উল রাজার নিকট জানতে চাইলে বলেন, কলাতলীতে এরকম কোন টার্মিনাল অনুমোদন নেই। আমরা বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। অভিযানে গেলে তারা পালিয়ে যায়। আবার বসে। যেন ইঁদুর বিড়ালে খেলা। শীগ্রই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

ট্রাফিক পুলিশের নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রকিব উল রাজা বলেন, আমাদের নামে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। খোঁজখবর নিচ্ছি। এরকম কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন