রাঙামাটিতে ত্রাণের চাল নিয়ে চালবাজি

fec-image

করোনোর কারণে পুরো দেশে এখন অঘোষিত লকডাউন চলছে। মানুষ করোনার থাবা থেকে বাঁচতে নিজে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী। এর প্রভাব পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে চলছে। তাই জেলার স্বাবলম্বরী বাসিন্দাদের এ দূর্যোগ কিছুটা মোকাবিলা করতে পারলেও শ্রমজীবী মানুষেরা পারছে না। এসব মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের পেটের যোগান দিতে  সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  রাঙামাটির পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মুসলিম পাড়া, নতুন পাড়া, সিএন্ডবি এলাকা, আনসার ক্যাম্প এলাকার কয়েক শতাধিক পরিবার সরকারি ত্রাণের দেখা পায়নি। তারা সকলে দুর্বিসহ মানবেতর জীবন পার করছেন।

নতুন পাড়ার বাসিন্দা নুরুন নাহার বলেন, আমাদের কেউ খোঁজ নেয় না। গত দু’দিন ধরে এক বেলা খেয়ে  কোনরকমে জীবন পার করছি। কান্নাজড়িত কন্ঠে এ নারী আরও বলেন, কে আমাদের খাবার দিবে? স্থানীয় কমিশনারকে ফোনে পাওয়া যায় না।

একই এলাকার নাজমা আক্তার বলেন, ক্ষুধার জ্বালায় কথা বলতে পারছি না। কমিশনারের কোন খবর নাই। সরকারি লোকে বলছে বাড়িতে থাকতে।  খাবার এনে দিবে। এর মধ্যে কাজ করতে পারছি না। কিন্তু  কেউ তো খাবার এনে দিলো না।
একই অভিযোগ সখিনা খাতুন, তাসমিম বেগম এবং চালক আবু তাহেরের। তারা সকলে কেউ এখনো ত্রাণের দেখা পায়নি।

অভিযোগ করেছেন ৬নং ওয়ার্ডের  সিএন্ডবি এবং আনসার ক্যাম্প এলাকার  চালক নয়ন ইসরাম, আরিফ উদ্দীন এবং শ্রমিক রাসেল। তারা এখনো ত্রাণের দেখা পায়নি। তাই দশ টাকার চাল কিনতে রাস্তায় বের হয়েছেন।

এদিকে পশ্চিম মুসলিম পাড়ায় ১৫০পরিবারের মতো মানুষ ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম। তিনি বলেন, কমিশনার একবার চারজন স্থানীয় ব্যক্তিকে চারটি কার্ড প্রদান করেছিলো। এরপর কমিশনারের দেখা নেই।

এদিকে জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানিয়েছে, রাঙামাটিতে ত্রাণের কোন অভাব নেই। গরিব, অসহায়, দুস্থ এবং কর্মহীন মানুষদের জন্য এসব ত্রাণ। তারা যেখানে অবস্থান করবে সেখানে গিয়ে ত্রাণ দিতে হবে। স্বাবলম্বী মানুষদের জন্য এসব ত্রাণ নয়।

তবে  বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তুলে বলেন, সামনে পৌরসভার নির্বাচন। তাই কমিশনাররা তাদের ভোট ব্যাংক এলাকায় নিজেদের পরিচিতিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে। যে কারণে প্রকৃত কর্মহীন, গরিব, দুস্থ মানুষেরা ত্রাণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ৬নং ওয়ার্ডের কমিশনার রবি চাকমা  বলেন, আমরা সকলকে পর্যায় ক্রমে ত্রাণ দিবো। এলাকা বড়, মানুষ বেশি। আমার অধীনে আসে সীমিত কার্ড। তাই হিসেবে করে প্রত্যোক এলাকায় ভাগ করে কার্ডগুলো দিতে হয়।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বোরহান উদ্দীন  মিঠু বলেন, ডিসি স্যারের স্পষ্ট অর্ডার আছে, কর্মহীন, অসহায় মানুষদের জন্য  সরকার এসব ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। কোন রকমের উল্টাপাল্টা  মেনে নেওয়া হবে না।

সরকার চাই কোন মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পাবে না। তাই তাদের মুখে আহার তুলে দিতে আমরা দিন-রাত কাজ করছি। যারা এ ধরণের হীন কাজের সাথে জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, ত্রাণ, রাঙামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন