রাতভর গ্রেফতার অভিযান: মওদুদ, আনোয়ার, রফিকুল, আওয়াল, শিমুল আটক: খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের গুজব: দেশব্যাপী গাড়িভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিষ্ফোরণ

78449_md

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

হঠাৎ করেই জাতীয় রাজনীতি বিপদজনক মোড় নিল। সংলাপ আলোচনার বাতাবরণ ভেঙে শুক্রবার রাতে বিরোধী দলীয় সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার অভিযানে নামে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা হরতালের ঘোষণা দেন। ঘোষণা শেষে জোটের নেতাকর্মী ও সংবাদকর্মীরা কার্যালয় ত্যাগ করার পর মাগরিবের আযানের পরই চেয়ারপারসনের কার্যালয় এলাকা ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনা প্রচার হওয়ার পর নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

এরপর শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে সোনারগাঁও হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় আটক করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে। রাত ১টার দিকে বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাস থেকে বের হওয়ার সময় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে আটক করা হয়। এছাড়া রাত ১১টার দিকে চেয়ারপারসন কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় কম্পিউটার অপারেটর হুমায়ুনকে আটক করে গুলশান থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। 

image_61479_0

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশান থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বেগম জিয়ার বাসার সামনে থেকে মিন্টু ও শিমুল বিশ্বাসকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে তাদের ডিসি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাতের মধ্যেই ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।’

এদিকে নিজ বাসার সামনে থেকে মিন্টু ও শিমুল বিশ্বাসকে আটক এবং বাসার কাছাকাছি দূরত্বে বিপুল সংখ্যক পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জন শোনা যায়। রাতেই বা যে কোনো সময় তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করে দলটির নেতারা।

চেয়ারপারসনের গুলশান ২ নম্বরের ৮৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর ভাড়া বাসার চারপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিপুল সংখ্যক মহিলা পুলিশও রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, রাতেই বিরোধীদলীয় নেতার বাসায় প্রবেশ করতে পারে পুলিশ। তল্লাশী চলানো হতে পারে গুলশানের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় ও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও।

এর আগে রাত ১২টা পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র, উপদেষ্টা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক এমএ মান্নান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন অসীম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। তবে তাদেরকে বাসায় না পেয়ে পুলিশ ফিরে যায়।

সূত্র আরও জানিয়েছে, রাতের মধ্যেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুল্লাহ আল নোমান ও শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মজিবর রহমান সরোয়ারসহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রধান নেতাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এছাড়া ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে।

সিনিয়র নেতাদের আটকের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এ মুহূর্তে মুক্তি দিন, না হলে কর্মসূচি বাড়বে। আমাদের প্রতিরোধ প্রচণ্ড রূপ ধারণ করবে।’

তিনি বলেন, ‘৭২ ঘণ্টার ঘোষিত কর্মসূচি থেকে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত হবো না। হরতাল তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। সারাদেশে যেখানে এ সরকারের অনুচররা থাকবে তাদের ঘেরাও করা হবে। যারা এ সরকারকে ঠিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে তারা পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আধিপত্যবাদী শক্তির দোসর হয়ে গেছেন। একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচন করার জন্য এবং বিরোধী দলকে মরণকামর দেয়ার জন্য প্রবীণ নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বিরোধী দলের লাশের মিছিল ডিঙিয়ে আবারও ক্ষমতায় যেতে চান।’

রিজভী সংবাদ সম্মেলন করার সময় বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ প্রেসক্লাব এলাকায় অবস্থান নেয়। আটক এড়াতে রিজভী প্রেসক্লাবেই অবস্থান করছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে মানুষ খুন ও খুনের পরিকল্পনায় জড়িত থাকায় বিএনপির তিন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

এদিকে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মিরপুর ও আরামবাগে তিনটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে।ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন কুমার হাওলাদার বলেন, রাত সোয়া ১১টার দিকে কারওয়ার বাজারে পান্থপথের দিকে যাওয়ার মোড়ে একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। প্রায় একই সময় মিরপুর পুরবী সিনেমা হলেন সামনে একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। মধ্যরাতে আরামবাগে সোহাগ পরিবহনের একটি গাড়িতেও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ব্রজেন হাওলাদার বলেন, খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে বিএনপির তিন নেতাকে আটক করার পর ফার্মগেইট ও শ্যামলী এলাকায় কয়েকটি হাতবোমার ফাটানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।

এছাড়াও রাজধানীর বাইরে সীতাকুণ্ডু, নোয়াখালী, ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে গাড়ী ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ, ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকটি জেলায় শনিবার হরতাল আহ্বান করা হয়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন