রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও গেম চেঞ্জার টার্কিশ ড্রোন

fec-image

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের দ্বিতীর পরাশক্তি রাশিয়ার ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলার পর অনেকেই ভেবেছিল, ইউক্রেন হয়তো রাশিয়ার প্লেটে রাখা পুডিং হতে চলেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ান ও আন্তর্জাতিক নানা গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবার এ খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ১৭ কি.মি, বা ২৪ কি.মি. বা নানা দৈর্ঘ্যের বিশাল রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে যাত্রা করেছে। এমনকি তারা খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে, কিয়েভের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কার্যত এসব খবর কোনোটাই সত্যে পরিণত হয়নি। আজ শনিবার (৫ মার্চ) যুদ্ধের দশম দিনে রাশিয়া যখন এক তরফাভাবে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেছে, তখনও রাশিয়ার কিয়েভ দখলের কোনো খবর শোনা যায়নি।

বিভিন্ন সূত্রের খবর রাশিয়ার রাজধানীমুখী এই সৈন্য স্রোত থামিয়ে দেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব রেখেছে টার্কিশ ড্রোন বায়রাক্তার টিবি-২। রাশিয়ার বিশাল বিশাল সৈন্য বহরের কলামের অগ্রভাগে এই ড্রোন দিয়ে মিসাইল হামলা করে ইউক্রেনিয় সৈন্যরা। এতে রাশিয়ান দীর্ঘ সৈন্য কলামের অগ্রাভিযান থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা। এতে রাশিয়ান ইনফেন্ট্রি, আর্টিলারি ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে সমর বিশেষজ্ঞগণ তার্কিশ এই ড্রোন বায়রাক্তার টিবি-২ কে এ যুদ্ধের গেম চেঞ্জার বলে দাবি করছে। ইতোপূর্বে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধের গতিপথও নির্ধারণ করেছিল এই টার্কিশ ড্রোনটি। আর তখনই বিশ্বব্যাপী আলোচনায় উঠে আসে টার্কিশ এই ড্রোনের নাম।

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে আজারবাইজানের হাতে থাকা টার্কিশ ড্রোনগুলো আর্মেনিয়ার আর্টিলারি ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মৃত্যুদূতে পরিণত হয়। ফলে সে সময় আর্মেনিয়ার পশ্চিমা মিত্র কানাডা টার্কিশ এই ড্রোনে ইঞ্জিন সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নিলে ইউক্রেন এই ড্রোনের জন্য ইঞ্জিন সরবরাহ করতে এগিয়ে আসে। শুধু আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ নয়, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইরাকি ফ্রন্টেও টার্কিশ এই ড্রোন দারুণ কার্যকারিতাে দেখিয়েছে।

এদিকে টার্কিশ এই ড্রোনের সাফল্যে ইউক্রেনের কিয়েভ পুলিশের একটি কুকুরের নাম রাখা হয়েছে ‘বায়রাক্তার’। শুক্রবার (৪ মার্চ) টুইট বার্তার মাধ্যমে ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “একটি কুকুর ছানার নাম রাখা হয়েছে ‘বায়রাক্তার’। সে বর্তমানে কিয়েভ অঞ্চল পুলিশের ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত আছে। শত্রুর আগমন অনুভব করা মাত্র সে চেঁচাতে শুরু করে, যা বিস্ফোরণের আগাম সতর্কবার্তা।”

গত বুধবার (১ মার্চ) প্রদত্ত এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভ বলেন, ‘রাশিয়ান আক্রমণ প্রতিরোধে ড্রোন (বায়রাক্তার টিবি-২) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নতুন বায়রাক্তারগুলো ইতোমধ্যেই চলে এসেছে এবং যুদ্ধে মোতায়েন করা হয়েছে।’

অসমর্থিত সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার এন্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল ডিভিশনের ক্যাপ্টেন অ্যালেস্কি পেনক্রাটভ’কে ২টি ইউক্রেনীয় বায়রাক্তার টিবি-২ ড্রোন ভূপাতিত করার জন্য ‘রাশিয়ার নায়ক’ উপাধি প্রদান করা হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, চলমান যুদ্ধে এ ড্রোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, শত্রুর আক্রমণ প্রতিহতকরণে বর্তমান বিশ্বে তুলনামূলক বহুগুণ কম দামে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়েছে বায়রাক্তার টিবি-২। যার সঠিক ব্যবহারের কারণে ইউক্রেনের মতো মাঝারি সামরিক শক্তির দেশের বিরুদ্ধেও আক্রমণে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে সুপার পাওয়ার রাশিয়াকে।

রাশিয়ার অসীম শক্তি এবং সামরিক বিশালতা, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে ইউক্রেনের জন্য আজারবাইজানের ন্যায় বিজয় হয়তো নিশ্চিত করতে পারবে না টার্কিশ বায়রাক্তার টিবি-২। তবে এটা সত্য যে, আবারও গুণগত মান ও যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকরিতার প্রমাণ দিয়েছে ড্রোনটি। (সূত্র: দ্য জেরুজালেম পোস্ট ও টুইটার)

লেখক: প্রতিরক্ষা বিষয়ক তথ্য সংগ্রাহক

লেখকের আরো লেখা পড়ুন:

বৃহৎ প্রতিবেশী ও আন্তর্জাতিক শক্তির মাঝখানে যখন অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্র

মেটাভার্স কী এবং মেটাভার্স বিশ্বে কী পরিবর্তন আনতে চলেছে

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইনসার্জেন্সি মোকাবিলায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন