রেশমার জন্য দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

247452_452751561480201_900503609_n

“১৭ দিন পানি খেয়ে বেঁচেছিলাম। উদ্ধারকর্মীরা ওপর থেকে নানা সময়ে বোতলজাত পানি পাঠান। আমি সেখান থেকে দুই বোতল পানি সংরক্ষণ করে রাখি। সেই বোতলের পানি আমি প্রতিদিন অল্প অল্প করে খেয়ে জীবন বাঁচাই।”

 ডেস্ক নিউজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমাদের উদ্ধারকর্মীরা ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে টানা ১৭ দিন দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে আসছেন।”

ধসে পড়ার ১৭ দিন পর রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া নারী পোশাক শ্রমিক রেশমাকে দেখতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এসে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া রেশমা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। সাবধানে খাবার দেওয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে।

রেশমা জীবিত উদ্ধার হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে যারা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানান।

রেশমার বিষয়ে তিনি বলেন, “উদ্ধারের পরপরই তাকে এখানে (সাভার সিএমএইচে) নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদান করা হবে।”

রেশমা এখন কিছুটা সুস্থ উল্লেখ করে তিনি রেশমার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, “ দেশবাসীর কাছে রেশমার জন্য দোয়া চাচ্ছি।”

এ পর্যন্ত দুই হাজার চারশ’ ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার ও এক হাজার ৪৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এ উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে আরও জীবিত প্রাণ থাকার সম্ভাবনা বিবেচনায় উদ্ধার কাজ আরও সতর্কতার সঙ্গে চালানোরও পরামর্শ দেন।  

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে সাভার সেনানিবাসে নামেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ৬টা ৩৫ মিনিটে সিএমএইচে যান। রেশমাকে দেখে বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

 এদিকে “১৭ দিন পানি খেয়ে বেঁচেছিলাম। উদ্ধারকর্মীরা ওপর থেকে নানা সময়ে বোতলজাত পানি পাঠান। আমি সেখান থেকে দুই বোতল পানি সংরক্ষণ করে রাখি। সেই বোতলের পানি আমি প্রতিদিন অল্প অল্প করে খেয়ে জীবন বাঁচাই।”

ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় কথাগুলো বলছিলেন সাভারের রানা প্লাজার ভয়াবহ ভবন ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার হওয়া নারী পোশাক শ্রমিক রেশমা।

রেশমা বর্তমানে সাভারের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছেন।

আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেশমা গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি ১৭ দিন পানি খেয়ে বেঁচেছিলাম। ভবন ধসের পরপরই আমি ভবনের নিচে আটকা পড়ি। পরে বাঁচার জন্য ভবনে অবস্থিত নামাজ ঘরে চলে যাই। উদ্ধারকর্মীরা ওপর থেকে নানা সময়ে বোতলজাত পানি পাঠান। আমি সেখান থেকে দুই বোতল পানি সংরক্ষণ করে রাখি। সেই বোতলের পানি আমি প্রতিদিন অল্প অল্প করে খেয়ে জীবন বাঁচাই।”

রেশমা আরও বলেন, “অন্যদের ফেলে যাওয়া খাবারও খেতাম। তবে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ফুটো থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়তো। এসব খেয়েই বেঁচেছিলাম। এক সময় খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখন একটু একটু করে পানি খেয়ে বেঁচেছিলাম। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম। শেষের দুই দিন পানিও শেষ হয়ে যাওয়ায় কিছুই খাওয়া হয়নি।

ভবন ধসের ৪০৮ ঘণ্টা পর ধসে যাওয়া রানা প্লাজা থেকে উদ্ধার রেশমা আরো বলেন, “উদ্ধারকর্মীরা যখন উদ্ধার কাজ চালাচ্ছিলেন, তখন আমি বড় বড় যন্ত্রের শব্দ শুনতে পেতাম। শব্দ শুনে আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ হয়তো আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবেন।”

সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে। তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। সাবধানে খাবার দেওয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে।

রেশমার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে তুলসিবাড়ি গ্রামে। তারা তিন বোন, দুই ভাই। সবার ছোট রেশমা। সাত মাস আগে স্বামী রাজ্জাক তাকে ছেড়ে চলে যান।

রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ বটমস নামের কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন রেশমা। এখানে তিনি দেড় বছর ধরে কাজ করে আসছেন।

এর আগে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে রেশমাকে উদ্ধার করা হয়। ৩টা ২০ মিনিটের দিকে ভবনটির বেসমেন্টে তাকে জীবিত সন্ধান পাওয়া যায়। বেসমেন্টের নামাজ পড়ার স্থানে রেশমা আটকে ছিলেন। পুরো ভবনটি ধসে পড়লেও ওই স্থানে তিনি অক্ষত ছিলেন।

তাকে দেখার পর কাটার মেশিন দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি শুরু হয়। প্রায় ৪৫ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষে রেশমাকে জীবিত ও অক্ষত বের করা হয়। এভাবেই সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের আপ্রাণ চেষ্টায় ভবন ধসের ৪১৫ ঘণ্টা পর শেষ পর্যন্ত রেশমাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সেনা সদস্য মোয়াজ্জেম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা প্রথমে তাকে অল্প পরিমাণ পানি ও বিস্কুট দেই। তার সঙ্গে শুকনা খাবার ও পানি ছিল। সেগুলো খেয়ে এতোদিন বেঁচেছিলেন তিনি। তবে খাবার ও পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষের দুই দিন তিনি না খেয়েছিলেন।”

কর্নেল মইনের নেতৃত্বে এ উদ্ধার কাজ চালানো হয়। উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া একজন সেনা কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৪৫ মিনিট উদ্ধার অভিযান চলে।

রেশমার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে তুলসিবাড়ি গ্রামে। তারা তিন বোন, দুই ভাই। সবার ছোট রেশমা। সাত মাস আগে স্বামী রাজ্জাক তাকে ছেড়ে চলে যান।

রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ বটমস নামের কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন রেশমা। এখানে তিনি দেড় বছর ধরে কাজ করে আসছেন।

তার সন্ধান পাওয়া উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবক রফিক বাংলানিউজকে বলেন, “আমি ওই স্থানটি দিয়ে যাতায়াত করছিলাম। এ সময় একটি পাইপ নড়ে ওঠে। আমি পাইপটির কাছে যাই, এরপর গোঙানির আওয়াজ শুনি। একটি ফুটো দিয়ে কান পাতলে ভেতর থেকে এক নারী কণ্ঠ বলে ওঠে, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। তিনি তার নাম বলেন রেশমা। ধ্বংসস্তূপের ভেতরে রেশমা অক্ষত অবস্থায় বসে ছিলেন। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত অনেকেই তার সঙ্গে কথা বলেছেন।”

রেশমাকে উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী দল বেশ কিছুক্ষণ ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার বন্ধ রাখেন। এ মুহূর্তে আরো জীবিত প্রাণ আছে কিনা তা সন্ধান করে দেখছেন উদ্ধারকর্মীরা।

ঘটনাস্থলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী উপস্থিত আছেন।

গত ২৪ এপ্রিল সকাল পৌনে ৯টার দিকে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন