রোকেয়া দিবস: সমতা, ন্যায্যতা এবং গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের অঙ্গিকার

fec-image

সময়কে ছাপিয়ে নিজ কর্মগুণে নারীমুক্তি তথা মানবমুক্তির পথে অবিস্মরণীয় একটি নাম বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়া তার লেখনীর মাধ্যমে, সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দকে বিসর্জন দিয়ে হাজার নারীর মাঝে তাঁর চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়ার অনুপ্রেরণামূলক কাজ বর্তমান নারীদের এতদূর নিয়ে এসেছে। সরকারের উদ্যেগে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন করা হয় জাতীয় দিবস হিসেবে। তার-ই ধারাবাহিকতায় নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বেগম রোকেয়ার শিক্ষা ও দর্শনকে অনুসরণীয় রেখে নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদেরকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যকে মূল উপজীব্য রেখে বেগম রোকেয়া দিবস পালন করেছে কোস্ট ফাউন্ডেশন।

৯ ডিসেম্বর উখিয়ার রত্নাপালং এ কোস্ট ফাউন্ডেশনের মাল্টি পারপাস সেন্টারে ৩০ জন কিশোরী এবং তাদের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বেগম রোকেয়া দিবস পালন করা হয়।

বিশেষ করে কিশোরী মেয়েদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করণের উদ্দেশ্যেই কিশোরী এবং তাদের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, উখিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন্নেসা বেবী।

তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে পরিবার ও সমাজের ভুমিকা অপরিসীম। কখনো শুধুমাত্র পুরুষের উপর নির্ভর করে সমাজব্যবস্থা চলতে পারেনা। নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। আমাদেরকে কিশোর কিশোরীদের প্রতি যত্নবান হতে হবে, তাদের বেড়ে উঠা থেকে শুরু করে চলাফেরা প্রতিটা বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। নারীদেরকে উদ্যোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

প্রধান অতিথি বলেন, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবনাদর্শ শুধু পড়লেই হবেনা, নিজের জীবনের অনেক ক্ষেত্রে ই তাঁর জীবনাদর্শ আমাদেও অনুকরণীয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বুলবুল আক্তার, রুহুল্লার ডেবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জ্যোতি বড়ুয়া, রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার রাজিয়া বেগম, বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. আক্তার কামাল এবং উখিয়ার বিশিষ্ট নারী শিক্ষাবিদ মর্জিয়া বেগম।

শিক্ষিকা জ্যোতি বড়ুয়া বলেন, “তৎকালনি নারী সমাজের শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া।তিনি অনেক দুঃখে থেকে ও নিজেকে কখনো অসহায় ভাবেননি। তিনি চেয়েছিলেন নারী ও পুরুষ উভয়ই যেন সম-মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচেন। আমাদের সবাইকে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।”

বুলবুল আক্তার বলেন- “বেগম রোকেয়ার অনুপ্রেরণামূলক কাজ বর্তমান নারীদের এতদূর নিয়ে এসেছে। কিশোরী মেয়েদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবাকে ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে, ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি বন্ধ করতে হবে। মেয়েদের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, কন্যা এবং নারীদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে, উদ্যেগী হতে হবে, সবার আগে শিক্ষিত হতে হবে।”

উখিয়ার বিশিষ্ট নারী শিক্ষাবিদ মর্জিয়া বেগম বলেন, আমরা জানি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, রাজনীতি-সকল সমস্যা মোকাবেলায় পুরুষের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে নারী। এই সমাজ নারী ছাড়া কল্পনা করা যায় না। সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নারী এবং নারীদেরকেই নিজেদের ভাগ্যপরিবর্তনের লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে আগে, সচেতন হতে হবে শিক্ষিত হতে হবে নিজের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া নারীদের এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন দিবসকে প্রতিপাদ্য করে”

কোস্ট ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা তাহরিমা আফরোজ টুম্পার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- কোস্ট মাল্টিপারপাস সেন্টারের কিশোরী ইসরাত জাহান এমি এবং সাবনুর হোসাইন নুরী।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক জমিন উদ্দিন মোল্লা এবং ফারজানা জয়নব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন