রোহিঙ্গা নির্যাতনের কথা সরাসরি অস্বীকার মিয়ানমার প্রতিনিধিদের

Rohinga copy

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার:

কক্সবাজারে দুইদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকারী মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা নির্যাতনের কথা মানতে রাজী নন। তারা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপকালে নির্যাতনের বর্ণনা শুনলেও তা সরাসরি অস্বীকার করেছে বলেও জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের সাথে আলাপকারী রোহিঙ্গারা। রোববার কক্সবাজার এসে মিয়ানমারের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করেছেন।

সোমবার সকালে এ প্রতিনিধিদলটি যান উখিয়া উপজেলার বালুখালীর অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে ছিলেন দুপুর পর্যন্ত। এর পর প্রতিনিধি দলটি টেকনাফে লেদা ক্যাম্পে যান। ওখানেও সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলেন। দিনব্যাপী এসব প্রতিনিধি কথা বলেছেন রোহিঙ্গাদের সাথে।

এর আগে রোববার কক্সবাজার এসে প্রতিনিধি দলটি কথা বলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সাথে। বিকালে যান উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। দুই দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে কি করলেন মিয়ানমারের এ ১০ সদস্যের প্রতিনিধি তা নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেননি প্রতিনিধি দলের কেউ। এমন কি প্রতিনিধিদের সাথে থাকা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্মকর্তারাও এ নিয়ে কথা বলতে রাজী হননি।

তবে প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করা রোহিঙ্গাদের দাবি, এটি একটি কথিত প্রতিনিধি দল। যারা নির্যাতনের কথা শুনে উল্টো রোহিঙ্গাদের মিথ্যুক বলেছেন। এসব প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গাদের অনেকেই পরিবেশ সৃষ্টি হলে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি তারা।

সূত্র মতে, গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সংঘাতের পর ওখানে ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে সে দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য মতে এতে নতুন করে ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। যারা আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজারের কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের লেদা ও শামলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়।

এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। যেখানে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের কূটনৈতিক, জাতিসংঘের প্রতিনিধি, মিয়ানমারের কফি আনান কমিশনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তাদের নির্যাতনের কথা শোনেন।

সর্বশেষ রোববার কক্সবাজারে আসেন মিয়ানমার সরকারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সুচি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনের ১০ সদস্য। তারা দুইদিন ধরে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছেন। রোহিঙ্গারা বরাবরের মতো তাদেরও নির্যাতনের  নানা কথা তুলে ধরেন।

প্রতিনিধি দলের সাথে আলাপকারী বালুখালী ক্যাম্পের ফরিদা আকতার জানান, প্রতিনিধি তারা কি কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন জানতে চেয়েছেন। তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে কি ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন।

প্রতিনিধি দলের সাথে আলাপকারী একই ক্যাম্পের ইয়াসমিন আকতার জানান, বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কারণ হিসেবে তিনি প্রতিনিধি দলকে নারী ধর্ষণ, শিশু হত্যাসহ নানা নির্যাতনের কথা বলেছেন।

আনোয়ার কামাল নামের এক যুবক জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধি তার বক্তব্য শুনলেও সরাসরি নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে তাদের মিথ্যুক বলে মন্তব্য করেছেন। এমন কি এক প্রতিনিধি মিয়ানমারের ভাষায় ‘বাংলাদেশে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গা মিথ্যা গল্প বলছে বলে মন্তব্য করতে শুনেছেন।

হাফেজ আহমদ নামের অপর এক জন জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধিটি কৌশলে রোহিঙ্গাদের সাথে প্রতারণা করতে এসেছে। তাদের কাছে তিনিসহ অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করলে তারা ফিরে যাবেন। কিন্তু এর কোন উত্তর দেননি এসব প্রতিনিধি। তাই এ প্রতিনিধি দলটি প্রতারণা করছেন বলে মন্তব্য এ রোহিঙ্গার

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন