রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন সু চি

নিউজ ডেস্ক
 মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা ও নির্যাতন প্রশ্নে বেশি কথা না বলার ব্যাপারে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্যই তার কাছে আসল। তিনি সে কারণেই নাকি কথা বলেন নিজের ঢংয়ে, কাউকে খুশি করাকে গুরুত্ব না দিয়ে। মিয়ানমারে উগ্র বৌদ্ধদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দাঙ্গা, হত্যাযজ্ঞ ও হাজার হাজার শরণার্থীর অন্যদেশে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নোবেল জয়ী সু চি যে একেবারে নীরব তা কিন্তু নয়। আরব নিউজ

জাপান সফরে গিয়ে সু চি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নির্যাতন সম্পর্কে যেটুকু বলেন এবং যা বলেন তা শান্তির পক্ষে দীর্ঘদিন লড়াই করা এক নেত্রীর সঙ্গে ঠিক মানানসই কিনা সন্দেহ। এ নিয়ে আগেও কথা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ভারত সফর করার সময় এক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাঙ্গার জন্য বৌদ্ধ এবং রোহিঙ্গা দুপক্ষেরই নিন্দা করেছিলেন। আরও জানিয়েছিলেন, দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করতে চান বলেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান তিনি। তখন তাঁর আরেকটি মন্তব্যের কারণে বাংলাদেশেও সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সেবার বলেছিলেন, যারা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক, তাদের পূর্ণ অধিকার পাওয়া উচিত। তবে কিছু মানুষ বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে এসেছে কী না, এই প্রশ্নে বিরোধ রয়েছে। সীমান্তে নিরাপত্তার দিকটি দেখা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুদেশেরই দায়িত্ব। তাই যদি বেআইনি অনুপ্রবেশ ঘটে, তা বন্ধ করতে হবে।

রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকের স্বীকৃতি মিয়ানমারের সংবিধানও দেয়নি। তাই সে দেশে সব সময়ই তারা নিজভূমেও পরবাসী। তবু গণতন্ত্রের জন্য ১৫ বছর অন্তরীণ থাকা সু চির কাছে তাদের আশা তিনি নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের প্রতি সুবিচারের দাবিতে, তাদের বৌদ্ধদের পাশে সম্মানজনক এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সোচ্চার হবেন। কিন্তু সে আশার গুড়ে আবারও পড়ল বালি।

জাপান সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে এধরনের মন্তব্য করার পর নতুন করে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তার ‘আপোসকামী রাজনীতি’-র সমালোচনা। ক্রিস লেওয়া সেই সমালোচকদের একজন। ব্যাংককভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘দ্য আরাকান প্রজেক্ট’-এর পরিচালক লেওয়া মনে করেন মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের অবশ্যই রক্ষা করা উচিত, এ ব্যাপারে বেশি ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা সু চির কাছেই বেশি অথচ রোহিঙ্গাদের হতাশ করে তিনি এখনও আইন-কানুন মনে করিয়ে দেওয়া ছাড়া বিশেষ কিছু বলছেন না।

সু চির বুধবারের বক্তব্যেও নতুন কিছু পাওয়া যায়নি। বারবার একই বিষয় তোলা হচ্ছে বলে মৃদু অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বরাবরই নিজের মনোভাবের কথা সবাইকে জানিয়ে আসছেন। মনোভাবটা কী? তার মোদ্দা কথা হলোÑ মুসলিম নেতাদের সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে আমার। তাদের জন্য আমার কষ্ট হয়। মুসলমানরা কখনই মিয়ানমার ছাড়া অন্যকোনো দেশকে নিজের দেশ ভাবেননি।

তারা অন্য কোনো দেশের হতে পারেনÑ এটা তাদের অনুভূতিতেই নেই। আরো কষ্টের ব্যাপার হলো তাদের একথা ভাবতে বাধ্য করা যে, এদেশ তাদের নয়, সবার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান রেখেই বলছি, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক কিনা, এটা কিন্তু নির্ভর করছে দেশের প্রচলিত নাগরিক আইনের শর্তগুলো তারা কতটা পূরণ করছেন তার ওপর’।

অর্থাৎ, প্রকারান্তরে অং সান সু চি কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের নাগরিক ননÑ এ ধারণাকে খানিকটা ভিত্তিই দিয়ে দিলেন।

তবে সু চি আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, তার দেশে নাগরিকত্ব আইনের সংস্কার হলে তা রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্য করবে। মিয়ানমারে মুসলমান নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে সু চি বলেন, মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো দেশ তাদের দুর্দশা দূর করতে অঙ্গীকারবদ্ধ নয়। তবে এটাও দুঃখজনক যে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নাগরিক মনে করে না। এজন্যে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব আইন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে তোলা ও এ আইনের মূল্যায়ন জরুরি বলে সু চি স্বীকার করেন। আমাদের উচিত ভিন্ন মত ও পথের অনুসারীদের সঙ্গে সহাবস্থান করতে শেখা।

এদিকে ব্যাংককভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা দি আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লেওয়া বলেছেন, সু চির ভূমিকা নিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা খুবই বিরক্ত। তারা মনে করেন সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার ও অস্তিত্বের ব্যাপারে সু চির নৈতিক অবস্থান স্পষ্ট হওয়া উচিত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন