শিক্ষক নিয়োগে আবেদন ফি পাঁচ হাজার টাকা!

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা মাঝিরপাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসার একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে একজন উপাধ্যক্ষ নিয়োগ পদের আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। তাছাড়া অন্যান্য পদে আবেদনের ক্ষেত্রেও অন্যান্য ফি নির্ধারণ করেছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে সচেতন মহলে। পরিণত হয়েছে ” টক অব দ্যা পেকুয়া”।

আবেদনের জন্য চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অকল্পনীয় পরিমাণে টাকা চাওয়া হয়েছে- তাও অফেরতযোগ্য এমন দাবী তে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচটি পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে একজন উপাধ্যক্ষ, একজন অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, দুইজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, একজন নিরাপত্তা প্রহরী ও একজন আয়া (মহিলা) পদের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করেন। পাশাপাশি উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদনের জন্য তিন হাজার টাকা এবং নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া পদে আবেদনের জন্য দুই হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইসলামী ব্যাংক পেকুয়া শাখায় পে-অর্ডার করতে বলা হয়েছে। যা অফেরতযোগ্য। তাও একটি প্রাইভেট ব্যাংকে পে-অর্ডার করতে বলা হয়েছে যা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বিধিমালা লংঘন করছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের বিধির আলোকে এমপিওভুক্ত কোন মাদ্রাসার যেকোন নিয়োগের জন্য এক হাজার টাকার উর্ধ্বে নেওয়া যায় না। আর এসব লেনদেন বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে করা যায়না। কিন্তু মগনামা মাঝিরপাড়া মাদ্রাসার ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি।

মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসউদ বিন জলিল বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের ফি নির্ধারণ রীতিমতো অন্যায্য এবং হাস্যকর। এটি এক প্রকার ডাকাতি ও চাকরি প্রত্যাশীদের উপর জুলুম। চাকরির আবেদনের ইতিহাসে আমরা এমনটি দেখিনি। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে নিয়েছি।

উজানটিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও কক্সবাজার জেলা জর্জ কোর্টের আইনজীবী মীর মোশাররফ হোসেন টিটু বলেন, অধ্যক্ষ মহোদয় এত টাকা ব্যাংক ড্রাফট কোন বিধির আওতায় চেয়েছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশে একটি বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করলেন তিনি। আমিও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গর্ভনিং বডির সভাপতি ছিলাম।

এ ব্যাপারে জানতে মগনামা মাঝিরপাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এটি আমি একা করি নাই। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে এসব পদে ফি নির্ধারন করা হয়েছে। আমি কমিটির সদস্য সচিব ও অধ্যক্ষ হিসেবে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করি।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, সরকারী বিধিমতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি দেয়া হয়েছে। না জেনে-বুঝে কিছু মানুষ এ বিষয় নিয়ে অযথা সমালোচনা করে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কাসেম বলেন আসলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের কাছ থেকে এত টাকা আবেদন ফি চাওয়া যুক্তি সম্মত নয়। কারণ এলাকার বেকার ছেলে মেয়েরা চাকুরীর জন্য এত টাকা পাবে কোথায়। এজন্য শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা নেওয়া যায়।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) উলফাত জাহান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছালেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি অনৈতিক। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার চাইছে বিনা খরচে যোগ্য ব্যক্তিদের চাকরি দিতে। কিন্তু এমন সময়ে চাকরির আবেদনের জন্য এত বিশাল পরিমাণে টাকা চাওয়া খুবই হতাশাজনক। দাপ্তরিক খরচের জন্য তারা সর্বোচ্চ ৫-৭শ টাকা চাইতে পারতো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মগনামা মাঝিরপাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসা, শিক্ষক নিয়োগ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন