শ্যালিকার বাড়িতে খুন হওয়া সেই মোক্তারের পরিবারের করুন কাহিনী

nihotu-moktar-paribar-copy

পেকুয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজার পেকুয়ার টইটং ইউনিয়নের দরগা মুরা এলাকার মৃত রমজান আলীর পুত্র মোকতার হোসেন (৪০)। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তার অবস্থান দ্বিতীয়। সে স্ত্রী দুই ছেলে দুই মেয়ে সন্তানের জনক। বড় ছেলে শহিদুল ইসলামের বয়স ১৪ এর কাছাকাছি। অল্প আয়ের সংসারে লেখাপড়া করতে না পারায় মাত্র সিএনজি গাড়ির ড্রাইভিং শিখা শুরু করেছে।  দুই মেয়ে নার্গিজ ও তানিয়া ৯ আর ৭ বছর বয়স। একজন স্কুলে আসা যাওয়া করছে আরেকজন বোবা। ছোট ছেলেটা এখনো মায়ের কোলে।

পেশায় কাঠুরিয়া। পাহাড়ে একবার গাছ কাটতে গেলে ২-৩ মাস পর পর বাড়িতে এসে স্ত্রী সন্তান ও ভাই বোনের মুখ দেখতে পায়। যা আয় হয় তা দিয়েই চলতো তাদের সংসার। এ লোকটি আজ তাদের মাঝে নাই। রোববার মগনামা ইউনিয়নের নাপিতারদিয়া এলাকার শ্যালিকা তসলিমা বেগমের বসতবাড়িতে নির্মমভাবে খুন করা হয়। পাওনা টাকা চাইতে গিয়েই তার এ করুণ অবস্থা। তার অবর্তমানে অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে মুখাবয়ব নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অভাব অনটন এর মাঝে অন্যরাও কোন মতে বেঁচে আছে। সবার মুখমন্ডল দেখে বুঝা যাচ্ছে জগতের সকল হতাশা তাদের মাঝে। এরই মাঝে তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে হত্যা মামলার বাদি নিহতের ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন। তার যা অল্প সহযোগিতা তা দিয়ে চলছে তাদের সংসার।

সরেজমিন টইটংস্থ নিহত মোকতার হোসেনের বসতবাড়িতে গিয়ে কথা হয় স্ত্রী সন্তান, ভাই দেলোয়ার, আকতার ও তওহীদুল ইসলামসহ স্থানীয় গন্যামান্য ব্যক্তিদের সাথে। স্থানীয় কয়েক জন মুরব্বীসহ নিহতের ভাইয়েরা জানান, মোকতার হোসেন একদম সহজ সরল একজন ব্যক্তি। স্থানীয়ভাবে কারো সাথে কখনো ঝগড়া হয়নি। বেশিরভাগ সময় কাটাতেন গাছ কাটার জন্য বিভিন্ন পাহাড় বেষ্টিত এলাকায়। আত্বীয়দের জন্যও ছিল তার অসম্ভব ভালবাসা। বিগত ২বছর পূর্বে তার শ্যালক দেলোয়ার হোসেনকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ২লাখ টাকা ধার নেই ভায়রা ভাই বাদশা মিয়া। এ টাকা ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও ২বছরেও তা শোধ না করায় ঘটনার আগের দিন টাকার ব্যাপার নিয়ে মুঠোফোনে বাদশা মিয়ার সাথে নিহত মোকতার হোসনের কথা হয়। একপর্যায়ে তাকে মগনামাস্থ বাড়িতে গিয়ে টাকা নিয়ে আসার জন্য বলা হয়। রোববার রাতে নিহত মোকতার হোসেন শ্যালিকা তছলিমা বেগমের বাড়িতে গেলে পাওনা টাকা দেনা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বাদশা মিয়া, তছলিমা বেগম, হারুনসহ আরো কয়েকজন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কিরিচ দিয়ে মাথায় কোপ দেয়। হামলা পরবর্তি রাত অবধি তাকে হাসপাতালে না এনে মৃত্যু নিশ্চিত করেন সোমবার হাসপাতালে ভর্তি করালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষনা  করে। পরে ভাই দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে পেকুয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ০৬/১৬ইং।

বাদি দেলোয়ার হোসেন জানান, এজাহারে উল্লেখিত ৩জন ছাড়াও এ ঘটনায় আবদুল খালেক, বাদশা মিয়া(২) জড়িত। তারা প্রতিদিন আমাকে হুমকি দিচ্ছে। একজন আটক হলেও বাকি আসামীরা এখনো আটক হয়নি। এছাড়াও মামলার ক্লু নষ্ট করার জন্য হত্যার সময় তার গায়ে পরিহিত কাপড় গায়েব করে ফেলেছে। এগুলো উদ্ধার করা দরকার।

বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, পিতা সব সময় আমাদেরকে ছাঁয়ার মতো আগলে রাখতেন। শত কষ্টের মাঝে আমাদের দাবি দাওয়া পুরনে সচেষ্ট ছিলেন। ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করায় আয়ের পদ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমার যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে হবে। এছাড়া চাচারা সহযোগিতা করছে বলে এখন পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।  হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছেন বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন