সংকুচিত হয়ে আসছে উখিয়ার বিশাল বনভূমি

fec-image

আশির দশকে কক্সবাজারের অন্যতম বিশাল বনভূমি উখিয়া উপজেলার ৫৫ হাজার একর আয়তনের মোট বনভূমির দুই তৃতীয়াংশ বেদখল হয়ে গেছে। যদিওবা উখিয়ার বন রেঞ্জ কর্মকর্তা অস্বীকার করে বললেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া ৬ হাজার একর বনভূমি ছাড়া অন্যান্য বনভূমি বহাল তবিয়তে রয়েছে। সেখানে কোন অবৈধ স্থাপনা নেই। অথচ মঙ্গলবার উখিয়ার সহকারি কমিশনার ভূমির নেতৃত্বে উখিয়ার বন রেঞ্জ কর্মকর্তা থাইংখালী ময়নার ঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০১৩/১৪ সালের সামাজিক বাগান দখল করে গড়ে তোলা প্রায় ১২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেয়।

পরিবেশবাদী সচেতন মহল দাবি করছেন, উখিয়ার বনবীটে দখল পূর্বক স্থাপনা নির্মাণ, বনভূমির শ্রেণি পরিবর্তন, পাহাড় কেটে মাটি পাচার অব্যাহত থাকার কারণে বিশাল বনভূমির আয়তন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।

এ উপজেলার হলদিয়াপালং, থিমছড়ি, রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা, পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী, মোছার খোলা, তেলখোলা, ভালুকিয়া কেওয়াছড়ি এলাকার স্থাণীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে উড়ে আসা জুড়ে বসা কিছু লোক স্থানীয় হেডম্যান, ভিলেজার নামধারী অসাধু চক্র টাকার বিনিময়ে বনভূমির হাত বদল করে বনভুমির শ্রেণি পরিবর্তন পূর্বক অবৈধ বসতবাড়ি ও চাষাবাদ উপযোগী জমিতে রুপান্তর করছে।

এ ব্যাপারে হলদিয়াপালং বনবীট কর্মকর্তা সৈয়দ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, সে কর্মস্থলে যোগদানের আগে থেকেই সেখানকার বৃহত্তর বনভূমি বেদখলে চলে গেছে। যা এখন উদ্ধার করা বনকর্মীদের পক্ষে সম্ভব নয়।

উখিয়ার বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৫৫ হাজার একর বনভুমিতে ৮টি বনবীটে অবস্থান তার মধ্যে মোছার খোলা, থাইংখালী, বালুখালী, উখিয়া সদর, ওয়ালা বীট, হলদিয়া, রাজাপালং বনবীট ও দোছরী বনবীট।

স্থানীয় গ্রামবাসী জানালেন, আশির দশকে বিষেশ করে দোছরী, থাইংখালী বনবীটে জীব বৈচিত্র ও প্রাণী কূলের ছিল অবাধ বিচরণ। এ সময় তৎকালীন সরকার লঠ নিলাম প্রথা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে সরকারি বনভূমির উপর প্রভাব পড়ে। কাঠ ব্যবসায়ীরা বৈধ উপায়ে ব্যবসা করতে ব্যর্থ হওয়ায় অবৈধ উপায়ে বন সম্পদ লুটপাট করে স্থানীয় বনরেঞ্জ কর্মকর্তা বৈধতা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার ফলে উখিয়া বৃহত্তর বনভূমি গাছ শূণ্য হয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে থাকে বনভূমির উপর। স্থানীয় প্রভাবশালী থেকে শুরু করে নিম্ম আয়ের লোকজন দখল করে স্থাপনা তৈরি করলেও বনকর্মীদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

সরেজমিন উখিয়া সদর এলাকার অদুরে ওয়ালাবীট ঘুরে দেখা যায়, দখল বেদখলের কবলে পড়ে বীট কর্মকর্তার অফিস গৃহ হারিয়ে গেছে। বেদখল হয়ে গেছে আশেপাশের বনভূমি। উপজেলা বনরেঞ্জ কর্মকর্তা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে উক্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও তা আবার পুনরায় গড়ে তোলা হয়।

বনরেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, তারা বনভুমি রক্ষায় দৃশ্যমান ভুমিকা রাখছে। কিন্তু নির্বিচারে পাহার কাটা প্রতিরোধে তারা কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না লোকবল সংকটের কারণে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, যেভাবে পাহাড় কেটে মাটি বালি পাচার করা হচ্ছে, তাছাড়া কৃষি জমিতে বিভিন্ন প্রকার স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে তা যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে এ উপজেলার বনভূমির পাশাপাশি কৃষি জমির আয়তন ছোট হয়ে আসবে আশংকাজনকভাবে। যা আগামী প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন