সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে
গত কয়েকদিন ধরেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওপারে আরাকান জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংঘাত চলছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের ছোড়া কয়েকটি গোলাও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় এসে পড়েছে। আর দিনরাত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের শব্দও ভেসে আসছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মনে। এদিকে, দেশটিতে অত্যাচারিত হয়ে ফের বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে এসে আশ্রয় নেওয়া একাধিক পরিবারের সন্ধান মিলেছে। মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে এই পরিবারগুলো।
তাদের দাবি, এবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আরাকান জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীও (এএ) সেখানকার মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর চড়াও হয়েছে। বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মংডুর ক্যাম্পে নেওয়ার জন্য গত মাস থেকেই পাশবিক নির্যাতন শুরু করেছে তারা।
সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের কারণে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গারা। তবে তা খুবই সামান্য। এর মধ্যে গত দুই দিনে ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের ওপারে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন আরও হাজারো রোহিঙ্গা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।
কুতুপালং এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, ২০ থেকে ৩০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশ প্রবেশ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা বিষয়টি সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বেশ কিছু রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আসারও চেষ্টা করছেন। কিন্তু সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ও পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে এমনিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নতুন করে আরও রোহিঙ্গা এলে উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয় লোকজন বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ নতুন করে অভিযান শুরু করলেও বর্তমান পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা শান্ত। কিন্তু বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো ত্রাণের কথা জেনে তাঁরা বাংলাদেশে চলে আসছেন। কারণ, রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের মাত্রা একটু কমলেও রোহিঙ্গাদের কোনো কাজে বের হতে দিচ্ছে না মিয়ানমারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা রোহিঙ্গারা তাই ছুটে আসছেন বাংলাদেশে।
কুতুপালং ক্যাম্পে একাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, ঘুমধুম ও টেকনাফ সীমান্তে কয়েকশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে কয়েকজন কয়েকজন করে চলেও এসেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন তাঁরা।
রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা আসার বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে শোনার পর আমরা বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান করেছি। কিন্তু নতুন করে রোহিঙ্গা আসার সত্যতা পাওয়া যায়নি।