স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টায় ২০২৩ সালে ৬৬১৮ অভিবাসীর মৃত্যু

fec-image

ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের দেশ স্পেনের ভূখণ্ডে ঢুকতে গিয়ে ২০২৩ সালে ৬ হাজার ৬১৮ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর প্রাণ গেছে। এতে করে অনিয়মিতভাবে স্পেনে অভিবাসনের চেষ্টাকারীদের জন্য গত বছর ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।

অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা স্প্যানিশ সংস্থা ওয়াকিং বর্ডারস এই তথ্য সামনে এনেছে। স্প্যানিশ এই সংস্থাটি ক্যামিনাডো ফ্রন্টিরাস নামেও পরিচিত। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

মঙ্গলবার প্রকাশিত ওয়াকিং বর্ডারসের ওই প্রতিবেদন অনুসারে, প্রাণ হারানো অভিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগেরই – ৬ হাজার ৭ জনের – মৃত্যু হয়েছে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ থেকে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্নকারী বিশাল সমুদ্র অতিক্রম করার প্রচেষ্টায়। এর ফলে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর এই রুটটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অভিবাসন রুটে পরিণত হয়েছে।

স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত বছর সাগর পাড়ি দিয়ে ৩৯ হাজার ৯১০ জন স্প্যানিশ ভূখণ্ডে পৌঁছেছে। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বেশি।

ওয়াকিং বর্ডারস জানিয়েছে, অনেক প্রাণহানির ঘটনায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়নি বা এত দীর্ঘ সময় বিলম্ব করা হয়েছিল যে বহু অভিবাসীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়।

ওয়াকিং বর্ডারসের প্রধান হেলেনা ম্যালেনো প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করার সময় বলেন, ‘জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টার সক্ষমতা আছে। আমরা যদি ক্রুজ জাহাজ, মাছ ধরার জাহাজ বা ইউরোপীয়দের বহনকারী জাহাজগুলোর মতো অন্যান্য জাহাজকে ট্র্যাক করার জন্য একই ব্যবস্থা ব্যবহার করি তবে এই প্রাণহানি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।’

সংস্থাটির হিসেব অনুযায়ী, ৮৪টি নৌকা স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও সেগুলো সকল আরোহীকে নিয়েই সমুদ্রে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

আর সেনেগাল থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে কাঠের নৌকা ভাড়া করে অভিবাসীদের আসার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ২০২৩ সালটি বিশেষত প্রাণঘাতী ছিল। শুধুমাত্র ওই রুটেই গত বছর আনুমানিক ৩ হাজার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করার সময় সেনেগালিজ কর্মী পেপ সার বলেন, ‘সমুদ্রে মারা যাওয়া তরুণদের সেনেগাল সরকার বিরোধী বলে মনে করে, আর তাই তাদের মৃত্যুকে গোপন করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ঝুঁকিপূর্ণ যুবকদের রক্ষা করছে না যারা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও প্রতিশোধের ভয়ের কারণে দেশ ছেড়ে চলে যায়।’

মারা গেছেন। একইভাবে, মরক্কো এবং পশ্চিম সাহারা থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় সমুদ্রে ১ হাজার ৪১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের এই রুটের বাইরে পরবর্তী সবচেয়ে মারাত্মক রুট হচ্ছে ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে আলজেরিয়ান রুট। সেখানে গত বছর ৪৩৪ জন মারা গেছেন। এছাড়া জিব্রাল্টার প্রণালী এবং আলবোরান সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে গত বছর প্রায় ২০০ জন মারা গেছেন।

ওয়াকিং বর্ডারস বলছে, ২০২৩ সালে স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টায় ১৭টি দেশের নাগরিকরা মারা গেছেন। আর তাদের বেশিরভাগই আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর নাগরিক।

তবে তাদের ছাড়াও ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিকরাও মারা গেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন