নির্যাতনের অভিযোগে আবারো বান্দরবানের মিশনারি আশ্রম থেকে পালিয়েছে ১৩৫ শিশু
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগে আবারো বান্দরবানে মিশনারি পরিচালিত একটি আশ্রম থেকে ১৩৫ জন শিশু-কিশোর পালিয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে শিশুরা থানছি উপজেলার শান্তিরাজ ক্যাথলিক ধর্মপল্লী নামের ওই আশ্রম থেকে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য গত ১৬ মার্চ বান্দরবানের ফাতেমা রাণী ক্যাথলিক চার্চ থেকে আপত্তিকর অভিযোগে ৬৫ ছাত্রী একরাতে হোস্টেল ত্যাগ করেছিল।
আশ্রমটিতে শিশুদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানোসহ অনিয়ম অব্যস্থাপনার অভিযোগ এনেছেন শিশুদের অভিভাবকরা। তারা জানিয়েছে, আশ্রমটিতে শিশুদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হতো। শিশুরা তা খেতে না চাইলে তাদের মারধার করা হতো। এছাড়াও শিশুদের নানা ধরণের শরিরীক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হতো। অভিভাবকরা আরো জানিয়েছেন, এই ধর্মপল্লীতে শিশুদের বেশকিছু খ্রিস্টান ধর্মীয় অনুশাসন বাধ্যতামূলকভাবে পালন করতে হতো। এতে এক সময় শিশুদের মনে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হতো।
সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পর আজ বুধবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ পুলিশ কর্মকর্তরা আশ্রমটি পরিদর্শন করেছেন।
জানা যায়, বান্দরবানের দুর্গম থানছি উপজেলার তিন্দু, রোমাক্রী, বড় মদকসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার শিশু কিশোররা আশ্রমটিতে থেকে পড়ালেখা করতো। ক্যাথলিক মিশন ও অভিভাবকদের আর্থিক অনুদানে আশ্রমটি পরিচালিত হতো। আশ্রমটি পরিচালনা করতেন ফাদার লরেন্স। তিনি খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক ও ইতালীয় নাগরিক। ইতালীয় বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা থেকে অনুদান এনে এই মিশন পরিচালনা করতেন তিনি। আশ্রমটির কর্তৃপক্ষের অব্যস্থাপনা ও শিশু কিশোরদের ওপর নির্যাতনের নিপীড়নের অভিযোগে শিশু কিশোররা আশ্রমটি ছেড়ে রাতে পালিয়ে গেছে বলে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যলাচিং মার্মা জানিয়েছেন।
থানচি উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, আশ্রম থেকে ১৩৫ শিক্ষার্থীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বুধবার বিকেলে জরুরী সভার আহ্বান করা হয়েছে। চার্চের পরিচালক ফাদার লরেন্স এক মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান শেষে থানচিতে ফিরে এসেছেন বলে তিনি জানান।
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাংসা মুঠোফোনে জানান, দীর্ঘদিন থেকে আশ্রমটিতে অনিয়ম অব্যস্থাপনা ছিল। সম্প্রতি শিশুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে গেলে ও খাবারের সংকট দেখা দেয়ার পর শিশু কিশোররা আশ্রমটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জুমের ফসল না উঠায় শিশুদের অভিভাবকরা ঠিকমতো আর্থিক অনুদান দিতে পারছিল না। সেই সঙ্গে আশ্রমটিতে খাদ্য সংকট ও শিশুদের ওপর নির্যাতন নিপিড়ন বেড়ে যাওয়ায় শিশুরা গভীর রাতে সুযোগ বুঝে পালিয়ে বনে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। পরে তারা তাদের নিজ নিজ গ্রামে চলে যায়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে থানছি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর আলী জানান, শিশুদের পালিয়ে যাওয়ার কারণ ও আশ্রমটি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
আশ্রমটির পরিচালক ফাদার লরেন্স জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
ফাইল ছবি: বান্দরবানের একটি খ্রিস্টান মিশন