উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চলছে পুরোদমে
উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে বেপরোয়া ভাবে আসছে ইয়াবা। প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চিহ্নিত কিছু রোহিঙ্গা ইয়াবা পাচারকারী। সাথে জড়িত রয়েছে কতিপয় স্থানীয় চিহ্নিত কারারিবা। প্রশাসন বিষয়টি জানার পরও রহস্যজনক কারণে তা বন্ধ হচ্ছেনা। এছাড়াও পালিয়ে যাওয়া ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আবার এলাকায় ফিরে পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে দেশে প্রবেশ করছে যুবসমাজ ধ্বংসকারী মরণ নেশা ইয়াবা ও মাদক। সীমান্ত ঘেষা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক, উখিয়া করইবনিয়া ডেইলপাড়া সড়ক, মেরিনড্রাইভ সড়ক ও সাগর পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার ইয়াবা পাচার হয়ে এ দেশে আসছে। পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারের তৈরি ইয়াবার বিস্তার বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শহরের অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিক এলাকাসহ পাড়া মহল্লায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা। বিশেষ করে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে বেপরোয়া ভাবে ঢুকছে লাখ লাখ পিচ ইয়াবার চালান। প্রায় সময় ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটলেও ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়নি। বরং প্রায় প্রতিদিনই এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সদস্য। উখিয়া উপজেলার আনাচে-কানাচে ইয়াবা পাচারে নারী পুরুষ, রোহিঙ্গা যুবক, যুবতী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও জড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, উখিয়া টেকনাফ উপজেলার অন্ততপক্ষে ৩০টি ইয়াবা সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে মরণঘাতী এ বাণিজ্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেশের বিভিন্নস্থানে ইয়াবা আটকের ঘটলেও বৃহৎ চালান গুলো চলে যাচ্ছে নিষিদ্ধ স্থানে। তাছাড়া আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা আটকের সময় মাঝে মধ্যে পাচারকারী আটক হলেও এর সাথে জড়িত রাঘববোয়াল বা গড়ফাদাররা আটক না হওয়ায় ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।
উল্লেখিত প্রতিটি সিন্ডিকেটে ৫০ জনের মত যুবক, যুবতী রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে ইয়াবা বাণিজ্য’র লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এদিকে বিগত কয়েক বছর ধরে ইয়াবা সহ মানব পাচার করে উখিয়ার অনেকেই এখন কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছে। উক্ত কালো টাকার মাধ্যমে অনেকেই আবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের অবৈধ টাকার কাছে সৎ, যোগ্য প্রার্থীরা হারিয়ে গেছে। মাদক ও ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে শীঘ্রই আইনের আওতায় নিয়ে এসে পবিত্র ইউনিয়ন পরিষদকে ইয়াবা ও মাদকমুক্ত রাখার দাবী জানান এলাকাবাসীরা।
জানা গেছে, ৯০ দশকে নেশার জগতে প্রবেশ করে ইয়াবা। শুরুতে দুবাই, পাকিস্তান থেকে ল্যাগেজ পার্টির মাধ্যমে এসব ইয়াবা এদেশে প্রবেশ করলেও তা ছিল ব্যয় বহুল ও সীমিত আকারে। এ সময় এক একটি ইয়াবা ট্যাবলেট ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ার সুবাদে ইয়াবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল নগন্য। ২০০৫ সালে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে এসব ইয়াবা তৈরি শুরু হয়। মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নেশা জাতীয় উপকরণ ও কাচাঁমাল দিয়ে স্বল্প ব্যয়ে ইয়াবা তৈরি করে এদেশে পাচার করতে থাকে। মিয়ানমারের তৈরি এক একটি ইয়াবা ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এসব ইয়াবা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফে আসার পর ঘুষ লেনদেন সহ প্রতিটির মূল্য দাঁড়ায় ১০০/১২০ টাকা । পরে এসব ইয়াবা কক্সবাজার চট্টগ্রামে ৩ থেকে ৫ শত টাকায় অনায়াসে বিক্রি হওয়ার সুবাধে ব্যাপক চাহিদা ও অল্প পুজিঁতে বেশি লাভবান হওয়ার আশায় ইয়াবা পাচারে ঝুঁকে পড়ে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত যুব সমাজ।
অভিযোগ উঠেছে, উখিয়া স্মাট যুবকরা হোন্ডা, মাইত্রেুা ও বিলাস বহুল গাড়ি নিয়ে ইয়াবা পাচারে নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। তারা বিভিন্ন সময় রুট পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রসাশনের ছোঁখ ফাঁকি দিয়ে। উখিয়া উঠতি বয়সী যুবকরা ছাড়াও দেশের অভিজাত পরিবারের যুবক যুবতীরাও কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল মনসুর বলেন, ইয়াবা ও মাদক প্রতিরোধে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু চিহ্নিত মাদক পাচারকারীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি কোটবাজার কমিউনিটি পুলিশিং এর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবি মাসুদ হোসেন বলেন, ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ী যত বড় ক্ষমতাধর হোক না কেন তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা। মাদক ব্যবসার আর মাদক সেবনকারী সংখ্যা সমাজে কমাতে হবে, সে ক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি সমাজের লোকজনকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, যে কোন কিছুর বিনিময়ে মাদক নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীকে ভোট দিবেন না, মাদকের বিরুদ্ধে যার অবস্থান তাকে ভোট দেবেন, তাকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন, তাকে সমাজের দায়িত্ব দেবেন। পরিশেষে তিনি জনতা পুলিশ ভাই হিসেবে এক সাথে মাদক, ইয়াবা, সন্ত্রাস এবং অপরাধ দমনে সহযোগিতা আহ্বান জানান।