ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে অপরূপ সাজেক ভ্যালী
দিদারুল আলম রাফি :
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্ঠিত ও অপার সম্ভাবনার জনপদ সাজেক। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত এই পাহাড়ী জনপদ।
সাজেকের সুউচ্চ পাহাড়ে দাঁড়ালে যে কেউ চলে যাবেন আকাশের কাছাকাছি। কল্পনাবিলাসী মনের অজান্তে হাত চলে যেতে পারে দূরের আকাশ ধরতে। আর নিচের দিকে তাকালে ভাবনা আসতেই পারে কিভাবে উঠলেন এতো উপরে! সেখানে আকাশ আর পাহাড়ের অপূর্ব মিতালী দেখে হয়তো মনের অজান্তে বলে উঠবেন- আরো আগে আসা উচিত ছিল। সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব সৃষ্টি সাজেক।
দেশের সর্ব বৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক। আয়তন ৬০৭ বর্গ মাইল। যা দেশের যে কোন জেলার চেয়েও বড়। লোক সংখ্যা মাত্র হাজার দশেক। সাজেকের রয়েছে, ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু পাহাড় বেষ্টিত হৃদয়গ্রাহী সবুজ বনানী পূর্ণ। সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালংসহ নাম না জানা অসংখ্য নদ-নদী। রাস্তার দু’ধারে-চোখে পড়বে উপজাতীয়দের বসত বাড়ী বিচিত্রময় জীবন ধারা।
সৃষ্টিকর্তার নিপূন সৃষ্টি আর সেনাবাহীনির হাতের ছোঁয়ায় সাজেক ধারণ করেছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। চলতি ২০১৪ সালের প্রথম সপ্তাহে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের আওতাধীন দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পাড়ায় শুরু হয়েছে রুইলুই জুনিয়র হাই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পর একটি জুনিয়র স্কুল পেয়ে স্থানীয় ও আশপাশের ২০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার এলাকাবাসীর আনন্দের সীমা নেই।
আনন্দের ষোলকলা পূর্ন হয়েছে একই সপ্তাহে সাজেকে যাওয়া-আসার জন্য প্রথমবারের মত বাস সার্ভিস চালু হওয়ায়। এর আগে নানা প্রতিকুলতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নির্মাণ করেন ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাগড়াছড়ি-দিঘীনালা-সাজেক সড়ক।
এর মধ্যে শুধু সাজেকে রাস্তার দুপাশে নির্মাণ করা হয়েছে ফুটপাত। লাগানো হয়েছে সোলার স্ট্রীট লাইট। সাঁঝ ঘনিয়ে আসলেই জ্বলে উঠে সোলার স্ট্রীট লাইটগুলো। পানি সরবরাহের জন্য পোর্টেবল ওয়াটার সাপ্লাইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সাজেকের লোকজনকে এখন আর বিশুদ্ধ পানির ভোগান্তিতে থাকতে হবেনা। এছাড়া সরকারিভাবে করে দেওয়া হয়েছে ক্লাব হাউজ, গীর্জা, মন্দিরসহ আরো অনেক প্রকল্প।
খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে বাস্তবায়িত হওয়া এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন চট্রগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল সাব্বিরুল ইসলাম। তাই সাজেকবাসীর কৃতজ্ঞতা সেনাবাহিনীর কাছে, সরকারের কাছে।
কিভাবে আসবেন সাজেকে:
বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকে ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম আসবেন। ঢাকার কমলাপুর এবং চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে শান্তি, এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ঈগল- এদের যে কোন পরিবহনে রাতে অথবা দিনে খাগড়াছড়ি আসা যায়। খাগড়াছড়ি থেকে ভাড়ায় চালিত যে কোন গাড়ি করে ১২০-১৫০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যাবেন সাজেকে।