বোরো চাষে বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

fec-image

অনুকূল পরিবেশ, সময় মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং নিবিড় পরিচর্যায় কৃষকের আশানুরূপ ফলন।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৭ হাজার ছয়শত ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে চাষাবাদ করতে কিছুটা বিলম্ব হলেও এ বছর ঠিক সময়ে চাষিরা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ, সময় মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় মাঠে মাঠে বোরো ফলেছে আশানুরূপ। ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। বর্তমানে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে সোনালি ধান ইতিমধ্যে কাটতে শুরু করছেন প্রান্তিক চাষিরা। চলতি মৌসুমে বোরো চাষাবাদে ফলন ভালো হওয়ায় চলতি বছরও লক্ষমাত্রা অতিক্রম হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এমনটা নিশ্চিত করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সর্বত্র এখন বোরো ফসলের মাঠে পাকা ধানের সোনালি হাসি। বৈশাখের উজ্জ্বল রোদে সেই হাসি আরও ঝলমল করছে। নতুন ধানের গন্ধে জনপদের গ্রামে-গ্রামে নবান্নের সাজ সাজ রব। মাঠে মাঠে কৃষকরা কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন। পচন্ড তাপদাহের মাঝে প্রান্তিক চাষিরা সকাল থেকে শুরু করে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত মাঠে-মাঠে ফসল কর্তনের চিরাচরিত দৃশ্য এখন সর্বত্র। বর্তমানে গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন এলাকায় ধান মাড়াই, বাছাই আর শুকানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষক পরিবার। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। তবে এ বছর শুরুর দিকে মিঠাপানির কিছুটা সংকট থাকলেও সময়মতো রাবারড্যাম ফুলিয়ে মিঠা পানি আটকে রাখায় ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ধানের ফলন ভালো হলেও কৃষকের মন ভরছে না। কারণ বর্তমান সময়ে কৃষিতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে এতে তাদের উৎপাদন খরচই মিলছে না এমন অভিযোগও করেছেন বেশ কয়েকজন প্রান্তিক চাষিরা।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন শাখা) রাজীব দে বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ১৭ হাজার ৬শত ৭০হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চাষাবাদ শুরু করা হয়। তৎমধ্যে এ বছর ১২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে উপশী জাত ও পাঁচ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়। জমিতে যেসব চাষাবাদ করা হয়েছিল তৎমধ্যে উপশী জাতের ব্রি-ধান ৬৭, ৭৪, ৮৮, ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ১০০। এছাড়াও হাইব্রিড জাতের মধ্যে চাষাবাদ করা হয় এসএলএইটএইট, ধানি গোল্ড, হিরা ২, এসিআই ও সিনজেনটা এস ১২০৫। মূলত জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার ও আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণে চাষাবাদে ফলন বৃদ্ধি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কর্মকর্তা মো.মহিউদ্দিন বলেন, ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে চাষের শুরুতেই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে নানা দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক কৃষকরা কৃষি বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক গুটি ইউরিয়া ও এলসিসি পদ্ধতি অনুসরণ করে বোরো চাষাবাদ শুরু করে। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষকেরা ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারে বলে জানান।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার ৬শত ৭০ হেক্টর জমিতে। উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মিঠাপানির সমস্যা কিছুটা দেখা দেয়। তারপরও কৃষকেরা ঠিকই বোরো চাষাবাদে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান কাটা শেষ হয়েছে। আশাকরি ২-১ সাপ্তাহের মধ্যেই অবশিষ্ট জমির বোরো ধান কাটা শেষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, চকরিয়া, বোরো চাষ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন