১৬ বছর পর পাকিস্তান গেরো খুলল বাংলাদেশ
খেলা ডেস্ক:
১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ওই বার শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর গঙ্গায় গড়িয়েছে অনেক জল। এবার প্রায় ১৬ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) লেখা হলো ভিন্ন রূপকথা। এবার আর জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসা নয়। অনেকটা বলে-কয়ে পাকিস্তানকে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে হারাল টাইগার বাহিনী।
ব্যাটিংয়ে তামিম, মুশফিকদের পর বোলিংয়ে আরাফাত সানি আর তাসকিনের দৃঢ়তায় পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে ১-০ তে লিড নিল টাইগাররা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩২৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৫০ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ফলে ৭৯ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় পাকদের।
তাসকিনের গতি আর আরাফাত সানির ঘূর্ণির সামনেই মূলত নাকাল হতে হয়েছে পাকিস্তানকে। অসাধারণ জয়ী এই ম্যাচটিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নিলেন মুশফিকুর রহিম। তামিমের ১৩৫ সত্ত্বেও মুশফিক ফেলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। কারণ একটাই, ৬৯ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরি উপহার দেয়ার কারণে।
পাকিস্তানি দুই ওপেনার সরফরাজ আহমেদ আর আজহার আলি যেভাবে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল ৩২৯ রানও নিরাপদ নয়। শঙ্কা দেখা দিয়েছিল গত এশিয়া কাপের ট্র্যাজেডি না আবার ফিরে আসে এবার। সেবার ৩২৬ রান করেও হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার সংগ্রহ ৩২৯ রান। দুই ওপেনারের উদ্বোধনী জুটিতে ৫৩ রান উঠে যাওয়ার পর এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
তবে আরাফাত সানি এসে ব্রেক থ্রু এনে দিলেন বাংলাদেশকে। তুলে নিলেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা পাকিস্তানি ওপেনার সরফরাজ আহমেদের উইকেট। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আরাফাত সানিকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে লাগিয়ে তুলে দেন সরফরাজ। ডিপ মিড উইকেটে দৌড়ে গিয়ে ক্যাচ তালুবন্দী করে নেন নাসির হোসেন। পতন ঘটলো পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের।
আরাফাত সানির পরের ওভারেই আবার উইকেট। তবে এবার রান আউট হলেন মোহাম্মদ হাফিজ। ১৩তম ওভারে সানির প্রথম বল মিড অফে ঠেলে দিয়েই দ্রুত একটি রান নিতে যান আজহার আলি। কিন্তু সৌম্য সরকার দ্রুত বল তুলে থ্রো করেন মুশফিকের হাতে। বল ধরেই উইকেট ভেঙ্গে দেন মুশফিক। আম্পায়ার রিপ্লাই নিয়ে আউটেরই সিদ্ধান্ত দেন। অথ্যাৎ ৫৩ রানের পর ৫৯ রানে পড়ল দ্বিতীয় উইকেট।
তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে হারিস সোহেল আর আজহার আলি মিলে ৮৯ রানের জুটি গড়ে বিপদেই ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। অবশেষে তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য হলেন ৭৩ বলে ৭২ রানে ক্রিজে থাকা আজহার। ৭টি বাউন্ডারির মার ছিল তার ইনিংসে। ১৪৮ রানে ঘটে তৃতীয় উইকেটের পতন। পাকিস্তানেরই শোয়েব আখতারের মত দু’হাত প্রসারিত করে, ঈগল পাখির মত ডানা মেলে উল্লাসে আকাশে উড়লেন যেন তাসকিন।
হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন হারিস সোহেলও। অর্ধশত করার পর ৩২তম ওভারের পঞ্চম বলেই তাসকিনকে পুল করতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে। মিড অন থেকে দৌড়ে গিয়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করে নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দলের ১৭৪ রানে ফিরে গেলেন হারিস সোহেল। ৬৪ বলে ৫১ রান করেন তিনি। ৪টি চার এবং একটি ছক্কার মার ছিল তার ইনিংসে।
৪২ রানের জুটি গড়ে এরপর ফাওয়াদ আলম আর মোহাম্মদ রিজওয়ান বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। কিন্তু আরাফাত সানি এসে হঠাৎই ঘুর্ণি ফাঁদে ফেলে আউট করলেন ফাওয়াদ আলমকে। আরাফাতের ফুলটস বল খেলতে গিয়ে মিড অফে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফাওয়াদ। একই ওভারে অভিষিক্ত সাদ নাসিমকে আউট ফিরিয়ে দিলেন আরাফাত সানি। বেচারা অভিষেকেই আউট হলেন কোন রান না করে। আরাফাত সানির ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে গেলেন সাদ নাসিম।
অভিষিক্ত মোহাম্মদ রিজওয়ান শুরুতেই ভালো একটা ইঙ্গিত দিলেন। জানান দিলেন, দীর্ঘ সময়ের জন্যই পাকিস্তান দলে জাগয়া নিতে এসেছেন তিনি। ৯ম পাকিস্তানি হিসেবে অভিষেকেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিলেন তিনি।
এর ফাঁকেই রুবেল আর ওয়াহাব রিয়াজ হয়ে গেলো খানিকটা। ৪৩তম ওভারের ৫ম বলে ইয়র্কার দিয়েছিলেন রুবেল। পা দিয়ে ঠেকান রিয়াজ। আবেদনে আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দিলে রিয়াজ রিভিউ নেন। এরপরই বিরোধ বাধে ওয়াহাব রিয়াজ আর রুবেলের মাঝে। যদিও রিভিউতে পরে বেঁচে যান রিয়াজ।
পরের ওভারেই তাসকিন আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন পাকিস্তানের এই বিতর্কিত পেসার। ৪৫তম ওভারে আসল ব্রেক থ্রুটি এনে দেন রুবেল হোসেনই। হাফ সেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ রিজওয়ান যখন ৬৭ রান করে ধীরে ধীরে ম্যাচ বের করে আনছিলেন, তখনই তাকে নাসির হোসেনের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন রুবেল। ৫৮ বলে ৬৭ রান করে ফিরে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৮টি বাউন্ডারিতে সাজান তার ইনিংসটি।
৪৫তম ওভারের শেষ বলে রুবেলের বল থেকে রান নিতে যান সাঈদ আজমল পরে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন জুনায়েদ খান। ৪৬তম ওভারে বল করতে আসেন সাকিব আল হাসান। প্রথম বলে ১ রান নেন রাহাত আলি। দ্বিতীয় বলে সাঈদ আজমলকে এলবিডব্লিউ করেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব আল হাসান। ২৫০ রানেই অলআউট হয় গেরো পাকিস্তান। ৭৯ রানে জয় নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ: ৩২৯/৬, ৫০ ওভার (তামিম ১৩২, মুশফিক ১০৬, সাকিব ৩১, সৌম্য ২০, সাব্বির ১৫, মাহমুদুল্লাহ ৫, নাসির ৩*; ওয়াহাব রিয়াজ ৪/৫৯, রাহাত আলি ১/৫৬)। পাকিস্তান: ২৫০/১০, ৪৫.২ ওভার (আজহার আলি ৭২, রিজওয়ান ৬৭, হারিস সোহেল ৫১, সরফরাজ ২৪, ফাওয়াদ আল ১৪; তাসকিন ৩/৪২, আরাফাত সানি ৩/৪৭, রুবেল ১/৪৫, সাকিব ১/৪৫)।
ফল: বাংলাদেশ ৭৯ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা: মুশফিকুর রহিম। টস: বাংলাদেশ।