অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর পল্লী চিকিৎসকসহ ২ জন উদ্ধার

fec-image

কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর পল্লী চিকিৎসকসহ দুইজনকে দুর্বৃত্তরা ছেড়ে দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ বলছে অভিযানের মুখে তাদের ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা কিন্তু স্থানীয়রা বলছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছাড়া হয়েছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালীর পাহাড়ি এলাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান, টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি।

মুক্তিপ্রাপ্তরা হল, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম থাইংখালী এলাকার জাকের হোসাইনের ছেলে পল্লী চিকিৎসক মো. জহির উদ্দিন (৫১) এবং টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর নয়াপাড়ার মৃত মো. শফির ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৩২)।

পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া দুইজনই শারীরিকভাবে অক্ষত রয়েছেন। তাঁদের শরীরে নির্যাতনের কোনো ধরনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

রোববার রাত ৯ টায় টেকনাফের বাহারছড়া স্টেশনে চেম্বার শেষ করে অন্য যাত্রীদের সাথে অটোরিকশা যোগে বাড়ি ছিলেন। তাদের বহনকারী গাড়ীটি শামলাপুর-হোয়াইক্যং সড়কের হোয়াইক্যং ঢালা নামক এলাকায় পৌঁছলে যাত্রী বেশী তিনজন অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে। পরে পল্লী চিকিৎসক জহির উদ্দিনসহ দুইজনকে পাহাড়ি এলাকার দিকে তুলে নিয়ে যায়।

ঘটনার পরপরই অপহৃত জহির উদ্দিনের ভাই ও স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ কমরুদ্দিন গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছিলেন, “ ঘটনার ঘণ্টা দেড়েক পর তার ভাইয়ের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তি ছয় লাখ মুক্তিপণ দাবি করেছিল। “

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, অপহরণ ঘটনাটি পুলিশ অবহিত হওয়ার পর থেকে অপহৃতদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করে। পুলিশের একাধিক দল রাত থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখে। তবে সকাল ১০ টার পর থেকে বাহারছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ের সম্ভাব্য অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালায়।

“ এতে সোমবার রাত ১১ টার দিকে শিলখালী পাহাড়ি এলাকায় অভিযানের মুখে সম্ভাব্য গ্রেপ্তার এড়াতে অপরাধীরা অপহৃত দুইজনকে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের শরীরের নির্যাতনে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। “

তবে স্বজনরা মুক্তিপণ দিয়েছে কিনা তা পুলিশ অবহিত নয় এবং উদ্ধার হওয়াদের জিজ্ঞাসাবাদের নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান ওসি।

অপহৃত জহিরের ছোট ভাই মোহাম্মদ কমরুদ্দিন বলেন, রাতে দুর্বৃত্তরা তার ভাইসহ দুইজনকে ছেড়ে দিয়েছে। পরে খবর পেয়ে শিলখালী পাহাড়ি এলাকা পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে। তার ভাইকে আনতে তিনি বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

মুক্তিপণ ছাড়াই তার ভাইসহ দুইজন ছাড়া পেয়েছেন তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ তার ভাইসহ অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। “

তবে স্থানীয় বাসিন্দাসহ ভুক্তভোগী জহির উদ্দিনের কয়েকজন স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুর্বৃত্তদের কাছে অন্তত ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে মুক্তিপণের টাকা কোথায়, কীভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তারা।

প্রসঙ্গত, গত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের এ পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২০ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের পরিবারের দেওয়া তথ্য মতে অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অপহরণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন