সালাউদ্দিন আহমদকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ভারতের আদালত

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

ভারতের শিলংয়ের একটি আদালত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাকে স্বদেশে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (২৬ অক্টোবর)শিলং সময় ২টা ৫০ মিনিটে শিলংয়ের আদালত ফরেনার্স অ্যাক্টের ওই মামলায় তাকে খালাস দেন। সালাহ উদ্দিন আহমদ এর প্রেস সচিব নুরুল ইসলাম হেলালী এই তথ্য নিশ্চিত করেন। শিলং এর নর্থ ইস্ট খাসিয়া হিল জজ আদালতের বিচারক ডি জি খারশিং গত ১৩ আগস্ট শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখেছিল। সেই রায় ঘোষণার জন্য ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য্য করা হয়েছিল বলে সালাহ্উদ্দিন আহমেদের আইনজীবী এসপি মোহন্ত জানান।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে আদালত রায় ঘোষণার ৫ম বার তারিখ পিছিয়েছে, ওই দিনই “আদালত আজকের রায়ের তারিখ ধার্য করেছেন। আমার মক্কেলের পক্ষে আমি এই মামলায় ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছিলাম এবং ন্যায় বিচার পেয়েছি।

সালাহ্উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স এ্যাক্টের ১৪ ধারায় তিন বছর যাবৎ এ মামলা চলছিল।

অবশ্য বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ্উদ্দিন আহমদের দাবি, তাঁকে বাংলাদেশ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং দীর্ঘদিন পর রাতের আঁধারে একদল সাদা পোশাকধারী লোক শিলং এ ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। অপরদিকে কোন্ পথে কীভাবে তিনি শিলংয়ে পৌঁছেছিলেন, সে তথ্যও ভারতীয় পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি।

ইতিমধ্যে সালাহ্উদ্দিন আহমদ তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে ন্যায় বিচারের পক্ষে ইতিপূর্বে সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন।

সালাহ্উদ্দিন আহমদ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। পরে তিনি চাকুরি ছেড়ে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া-পেকুয়া আসন থেকে ১৯৯৬-২০০১ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরে ওই আসন থেকে ২০০১-২০০৬ সালে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদও ২০০৯-২০১৪ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন।

নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে সালাহ্উদ্দিনের অন্তর্ধান নাটকীয়তার জন্ম দেয়। সে সময় তিনি ছিলেন দলের পাঁচ যুগ্ম মহাসচিবের একজন।

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির মূখপাত্র হিসেবে বিবৃতি পাঠিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছিলেন সালাহ্উদ্দিন আহমদ। এরই মধ্যে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ।

স্বামীর খোঁজ চেয়ে পরদিন গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি বলে সে সময় অভিযোগ করেন হাসিনা আহমেদ। সরকারের ‘নির্দেশে’ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই সালাহ্উদ্দিন আহমদকে ‘নিয়ে গেছে’ বলে সে সময় বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

কিন্তু তখন সরকারের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ নাকচ করছিল। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে বলছিলেন, সালাহ্উদ্দিন আহমদকে গ্রেফতার করা হয়নি তবে তাকে আটক করতে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পরে স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে যান সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমেদ। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, তারাও এই বিএনপি নেতার কোনো খোঁজ জানে না।

ঢাকা থেকে ‘উধাও’ হওয়ার দুই মাস দুই দিন পর ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে সালাহ্উদ্দিন আহমদের হদিস মিলে।

ওই দিন সালাহ্উদ্দিন আহমদ পুলিশকে বলেন, তার নাম সালাহ্উদ্দিন আহমেদ; তিনি বাংলাদেশি। কিন্তু ভ্রমণের কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।

পরে আটক অবস্থায় তিনি হাসপাতাল প্রিজনসেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন কিছুদিন কারাগার ও হাসপাতালে কাটানোর পর স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় জামিন পান সালাহ্উদ্দিন আহমদ। কিন্তু ভারত ছাড়ার অনুমতি না থাকায় স্ত্রী ও কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে শিলং শহরের ভেতরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন।

২০১৬ সালে অসুস্থতার কারণে আদালতের অনুমতি নিয়ে দিল্লি গিয়ে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিতে চাইলেও তাতে শিলং আদালতের অনুমতি মিলেনি। ফরেনার্স অ্যাক্টের মামলার তদন্ত শেষে মেঘালয় পুলিশ ২০১৫ সালের ৩ জুন সালাহ্উদ্দি আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই শিলংয়ের আদালত সালাহ্উদ্দিন আহমেদকে অভিযুক্ত করে তার বিচার শুরু করে। সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনা করেন (পিপি) আইনজীবী রাজীব নাথ। সালাহ্উদ্দিন আহমেদের আইনজীবী এসপি মোহন্ত বলেন, “আমার মক্কেল অসুস্থ। সাড়ে তিন বছরে ৫ বার রায়ের তারিখ পেছানো হয়েছে। এ আইনের মামলায় এত সময় নেওয়ার ঘটনা বিরল।” আমার মক্কেল অবশ্যই খালাস পাওয়ার আশায় ছিলাম অবশেষে আদালত খালাস দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন