হামলার অভিযোগে মৃত ৪ ব্যক্তিকে মামলার আসামী করায় রামুতে তোলপাড়

mamla-1_9

রামু প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের রামুতে ৪ মৃত ব্যক্তিসহ এলাকার অর্ধ শতাধিক লোকজনকে জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাটি করেন, রামুর রাজারকুলে অবস্থিত কক্সবাজার হ্যাচারি এন্ড ফিশারীজ প্রাঃ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরী।

এ মামলায় এনামুল হক সহ ৪১ জন এবং অজ্ঞাত ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে বাদীর হ্যাচারিতে লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তরা সবাই ওই হ্যাচারির জমির মালিক বলে জানা গেছে। ৪ মৃত ব্যক্তিসহ নিরীহ ব্যক্তিদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা করার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মামলায় অভিযুক্ত ওই হ্যাচারির জমির মালিক এনামুল হক জানিয়েছেন, মামলায় উল্লেখিত অভিযুক্তদের মধ্যে ৪ জন ২০১৪ সালের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন। এরপরও তাদের এ মামলায় অভিযুক্ত করার বিষয়টি হাস্যকর ও দুঃখজনক। এতেই প্রমাণিত হয় মামলাটি সম্পূর্ণ ভূয়া, উদ্দেশ্যমূলক ও সাজানো। তিনি আরো জানান, এ মামলায় ৯০ বছর বয়সী তাঁর পিতাসহ অনেক বয়োবৃদ্ধকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্ত ওই হ্যাচারির জমির অপর দুই মালিক মতিউর রহমান ও প্রদীপ বড়ুয়া জানিয়েছেন, ২০০৩ সালে তাদের মতো স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিদের জমি ভাড়া নিয়ে হ্যাচারী ব্যবসা শুরু করেন, মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরী। কিন্তু শুরুর কয়েকবছর যেতে না যেতেই হ্যাচারিটি বন্ধ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় হ্যাচারির বিভিন্ন মামলাল ও পুকুরসমূহ সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। সেই সাথে জমির মালিকরাও দীর্ঘদিনের বকেয়া ভাড়া না পেয়ে জমি বুঝিয়ে নিতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন। জমি ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চালালে মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরী গত ১০ মার্চ সাজানো এ মামলা (নং সিআর ৬২/১৬) করেন। বিজ্ঞ আদালত এ মামলার বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ মামলায় অভিযুক্ত মৃত ৪ ব্যক্তির মৃত্যু সনদ দিয়েছেন রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুর রহিম এবং ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো। মৃত্যু সনদ মতে এ মামলায় ১১ নং অভিযুক্ত ফতেখাঁরকুল দক্ষিনদ্বীপ গ্রামের মৃত কাছিম আলীর ছেলে ছৈয়দ আহমদ ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ২৭ নং অভিযুক্ত ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দক্ষিন দ্বীপ ফতেখাঁরকুল এলাকার মৃত মিয়া হোছনের ছেলে আবু তাহের ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর, ৩১ নং অভিযুক্ত রাজারকুল বৈদ্যেরখিল গ্রামের মৃত আতর আলীর ছেলে আবদুল খাঁ ২০১৪ সালের ৫ জুন এবং ৩৩ নং অভিযুক্ত ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের খোন্দকার পাড়ার মৃত আবুল হোছনের ছেলে হাজ্বী নুর আহমদ ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর মারা যান।

জমির মালিকরা আরো জানান, মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরী তার দায়েরকৃত মামলায় মৃত এ ৪ ব্যক্তি সহ এলাকার নিরীহ লোকজনকে অভিযুক্ত করে হয়রানির চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে নেয়া অর্থ নিজেই লুটপাট করে নিরীহ লোকজনের উপর দোষ দেয়ার হীন অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

জমির মালিকরা আরো জানান, হ্যাচারি শুরুর সময় জমির মালিকদের সাথে ১০ বছরের জন্য চুক্তি হয়েছিলো। কিন্তু সেই সময় থেকে হ্যাচারি অচল থাকায় কারনে বিপুল জমির ভাড়া (খাজনা) বকেয়া থাকায় জমি মালিকরা জমি ফিরিয়ে নিতে চাইলে উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৬ আগষ্ট রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলের প্রচেষ্টায় লিখিতভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয়, মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরী ওই বছরের সেপ্টম্বরের মধ্যে অতীতের (১০ বছরের) চুক্তিনামার বকেয়া দেনা পরিশোধ করবেন এবং ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ৫ বছরের জমির ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করে নতুন করে চুক্তিনামা সম্পাদন করবেন। অন্যতায় মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরী জমির দখল ছাড়িয়া দিতে বাধ্য থাকবেন। এ চুক্তির কোন শর্ত মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরী পালন করেননি। এরপরও তিনি বর্তমানে জমির দখল মালিকদের বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির পথ বেছে নিয়েছেন।

এদিকে মামলায় বাদী পক্ষের অন্যতম স্বাক্ষী রবীন্দ্র বড়ুয়া প্রকাশ অভি বড়ুয়া জানিয়েছেন, হ্যাচারিতে চলতি মাসে কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটলে তিনি অবশ্যই জানতেন।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মামলার বাদি কক্সবাজার হ্যাচারি এন্ড ফিশারীজ প্রাঃ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরীর সাথে রামুস্থ বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুস সাত্তার সরকার গত ৪ এপ্রিল রামুর রাজারকুল এলাকায় গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেন। তিনি জানিয়েছেন, এখন মামলাটির তদন্ত চলছে। মামলায় মৃত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত এসব মৃত ব্যক্তিদের মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সকল তদন্ত সম্পন্ন করে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে। মামলার স্বার্থে এর বেশী কিছু বলতে তিনি অপরাগতা জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন