অফিস বন্ধ রেখে সরকারি জনবল নিয়ে লক্ষীছড়ি ইউএনও’র বনভোজন

fec-image

খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদে সরকারি দপ্তর বন্ধ রেখে কক্ষে তালা দিয়ে সেবাগ্রহীতাদের দুর্ভোগে ফেলে কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের বহর নিয়ে ফটিকছড়ি কৈয়াছড়া চা বাগান ও রাবার ড্যামে বনভোজন সারলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন! বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরের তালিকায় অনিয়মসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে সরকারি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে!

প্রত্যক্ষদর্শী ও সেবাবঞ্চিতদের সাথে কথা জানা গেছে, সোমবার ১০ জানুয়ারি সকালে লক্ষীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন ও উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও সদ্য বিজয়ী ইউপি চেয়ারম্যান প্রবীল কুমার চাকমা, ত্রিলন চাকমা ও সুইচালা চৌধুরীসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে একটি বাস, দুইটি প্রাইভেট কারসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি গাড়ি নিয়ে বনভোজন গেছেন ইউএনও মো. ইয়াছিন! তাঁরা সকালে ফটিকছড়ির কৈয়াছড়া (ব্র্যাক) চা বাগান ও ভুজপুর রাবার ড্যামে আমোদ-প্রমোদে দিন অতিবাহিত করেন!

এদিকে পূর্ব ঘোষণা কিংবা সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ইউএনও কার্যালয়, ভূমি অফিস, এলজিইডি দপ্তর, কৃষি দপ্তর, হিসাব রক্ষণ দপ্তর, সমাজসেবা দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে বনভোজনে যাওয়ায় সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে আসা অসংখ্য সেবাগ্রহীতাকে ফিরে যেতে হয়েছে।

অনুন্নত জনপদের দীর্ঘ ১০/১৫ কিলোমিটার দূরের দুল্যাতলী ও বার্মাছড়ি থেকে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া উসাইপ্রু মারমা জানান, আমি অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতাল এসেছি। ভাবছিলাম সৃজিত বাগানের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করবো। কিন্তু অফিসে গিয়ে দেখি তালা বন্ধ। জানতে পারলাম স্যারেরা পিকনিক করতে গেছে।

বার্মাছড়ির মংথোয়াই মারমা জানান,আমি বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির বিষয়ে সমাজসেবা দপ্তরে গিয়ে কাউকে পাইনি। আবার দীর্ঘ ১৫/২০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে আমাকে আরেক দিন আসতে হবে।

এভাবে অসংখ্য সেবাগ্রহীতা সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের কোন দপ্তরে সরকারি সেবা পায়নি কোন গ্রহীতা।

লক্ষীছড়ি উপজেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয় বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে জুনিয়র অডিটর মো. রবিউল হোসেন জানান, ১০ জানুয়ারি সোমবার উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ইউএনও স্যার ও উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার সবাইকে নিয়ে বনভোজনে যাওয়ায় আমি অফিসে যাইনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফটিকছড়ি উপজেলার কৈয়াছড়া ব্র্যাক চা বাগানের এক কর্মচারী জানান, লক্ষীছড়ির ইউএনও স্যার সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নিয়ে চা বাগান ও রাবার ড্যামে পিকনিকে এসেছেন।

এদিকে উপজেলার পাশ্ববর্তী ফটিকছড়ির অধিবাসী ইউএনও মো. ইয়াছিন এই উপজেলায় যোগদান করার পর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে ঘর বিতরণ কার্যক্রমে লক্ষীছড়িতে তালিকা প্রস্তুতে অনিয়ম, স্বাবলম্বী পরিবারে ঘর দেওয়া, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ও বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ওয়াল নির্মাণ কাজের ঠিকাদারীতে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তাঁর এসব কাজে প্রতিবাদকারী একাধিক ব্যক্তি নানাভাবে মামলা হামলার শিকারও হয়েছেন। এসব নিয়ে ইতোপূর্বে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তারপরও অনিয়ম থেকে সরে না এসে বার বার বির্তকে জড়িয়ে পড়ছেন ইউএনও মো. ইয়াছিন।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য রেম্রাচাই চৌধুরী বলেন, লক্ষীছড়ির ইউএনও মো. ইয়াছিন এখানে যোগদানের পর থেকে সরকারের নানামূখী ও জনবান্ধব উন্নয়ন প্রশ্নবৃদ্ধ করেছেন। ইউএনওর বাসভবনে নিরাপত্তাকর্মীদের (আনসার) আবাসিক ভবণ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হলেও সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি ইউএনও মো. ইয়াছিন। এছাড়া উপজেলার কয়েকটি স্কুল ভবণ ও বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ কাজেও ইউএনওর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৩ ডিসেম্বর তাঁর বদলীর আদেশ হলেও না যাওয়ার জন্য ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে সম্প্রতি মানববন্ধন করিয়েছে ইউএনও! যা একজন সরকারি আমলার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত!

এ প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন এর সরকারি মুঠোফোনে কল দিলেও ইউএনও রিসিপ করেননি। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল কেটে দেন। যার ফলে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন