‘আদিবাসীর বদলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলা অপমানজনক’


‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পরিপত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি। জারি করা এ পরিপত্র সংবিধানবিরোধী উল্লেখ করে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলা অপমানজনক বলেও মনে করে কমিটি।
সোমবার (১ আগস্ট) পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্য মন্ত্রণালয় সংবিধানসম্মত শব্দচয়ন প্রসঙ্গে একটি পরিপত্র জারি করে। ওই পরিপত্রে আগামী ৯ আগস্ট, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টক শোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধ করা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র সংবিধান পরিপন্থি এবং মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক সমাজ তথা গোটা আদিবাসী জনগণের জন্য চরম অপমানজনক।
বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় এ বিষয়ে যথাযথভাবে মীমাংসার সুযোগ থাকলেও আদিবাসীদের দাবি উপেক্ষা করে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় শব্দগুচ্ছ সন্নিবেশ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী একটি অপমানজনক শব্দ। ‘ক্ষুদ্র’ বলার মধ্য দিয়ে সেই জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের চরমভাবে হেয় করার শামিল, যা সংবিধান পরিপন্থি। কোন জাতিগোষ্ঠী কী নামে পরিচিত হতে চায়, তা আইন দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। আত্মপরিচিতিই যে কোনো জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি নির্ধারণের মানদণ্ড।
বিবৃতিতে বলা হয়, টক শো বা অন্য কোনো মিডিয়ায় বা আলোচনায় ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না, এমন বিধিনিষেধ সংবিধানের সংশ্নিষ্ট অনুচ্ছেদ বা দেশের অন্য কোনো আইনে বলা নেই। বরং তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র জারির মাধ্যমে সংবিধান স্বীকৃত বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বহুত্ববাদের বাংলাদেশ গড়তে আদিবাসীদের মর্যাদাপূর্ণভাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানায় নাগরিক কমিটি।