ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমার স্মরণে খাগড়াছড়িতে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:
সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কেন্দ্রীয় নেতা মিঠুন চাকমার স্বরণে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে খাগড়াছড়িতে স্বরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন হয়েছে।
রবিবার(১৪জানুয়ারি) বিকালে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর মাঠে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক সচিব চাকমার সভাপতিত্বে ও জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরা, ইউপিডিএফ’র বান্দরবান জেলা সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, মহালছড়ি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমা, লক্ষীছড়ি সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রবীল কুমার চাকমা, পেরাছড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা, ভাইবোন ছড়া ইউপি চেয়ারম্যান পরিমল ত্রিপুরা ও নুনছড়ি মোজা হেডম্যান ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা।
স্মরণসভার সভাপতি ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা বলেন, তিনি মিঠুন চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসার সময় লোকজনকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বাধা প্রদানের অভিযোগ করে সমালোচনা করেন এবং মিঠুন চাকমার চিহ্নিত হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।
তিনি হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, মিঠুন চাকমার হত্যাকারীদের যদি গ্রেফতার ও শাস্তি দেওয়া না হয় তাহলে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। মিঠুন চাকমার শোক গণবিক্ষোভে পরিণত হবে।
পরিমল ত্রিপুরা বলেন, মিঠুন চাকমাকে যারা খুন করেছে তারা জুম্ম মেধাকে হত্যা করেছে। তিনি শুধু জুম্মদের অধিকার নিয়ে কথা বলেননি, তিনি জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন, লেখালেখি করেছেন।
সুপার জ্যোতি চাকমা মিঠুনকে স্মরণ করে বলেন, মিঠুন চাকমা আমার ব্যক্তিগত জীবনে খুব কাছের মানুষ ছিলেন। আমরা একসাথে লড়াই করেছি, মিছিলে শ্লোগানে গলা ফাটিয়েছি। তিনি মিঠুন চাকমার আদর্শ লালন করে তার শূণ্যটা পূরণের জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
তপন বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, মিঠুন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতীয় মুক্তির স্বপ্ন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ধারণ করেছিলেন। তিনি নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। আমি মনে করি হত্যাকারীরা মিঠুন চাকমাকে হত্যা করতে সক্ষম হলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। লক্ষ লক্ষ মিঠুনের জন্ম পার্বত্য চট্টগ্রামে হবে।
পরিমল ত্রিপুরা বলেন, মিঠুন চাকমাকে যারা খুন করেছে তারা জুম্ম মেধাকে হত্যা করেছে। তিনি শুধু জুম্মদের অধিকার নিয়ে কথা বলেননি, তিনি জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন, লেখালেখি করেছেন।ইউপিডিএফের বান্দরবান জেলা নেতা ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কিছু কিছু মৃত্যু বেলে হাঁসের পালকের চেয়ে হালকা আর কিছু কিছু মৃত্যু থাই পাহাড়ের চেয়েও ভারী। শহীদ মিঠুন চাকমার মৃত্যুর হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের হাজারো পাহাড়ের চেয়েও ভারী।স্মরণসভা শেষে সন্ধ্যায় মিঠুন চাকমার স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের স্লুইস গেইট এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিডিএফ) কেন্দ্রীয় নেতা মিঠুন চাকমা নিহত হয়। ইউপিডিএফ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করে আসছে। তবে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এ হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেছেন, এটি প্রসীতের ইউপিডিএফ’র আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে হয়েছে মিঠুন চাকমার হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৬ ও ৭ জানুয়ারি পর পর দু’দিন ইউপিডিএফ’র সড়ক অবরোধ পালনকালে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ এবং আধা সামরিক বাহিনীর বিজিবির গাড়ি বহরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৯ বছর পর গেল বছরের ১৫-ই নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রভাবশালী পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ভেঙ্গে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে আরো একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিভক্তির পর সংগঠনটির কোন নেতাকর্মী প্রথম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন।