ইরান থেকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আউট


ইরানের পারমাণবিক তিনটি কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ভবিষ্যত নিরাপত্তায় একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ইরান কর্তৃপক্ষ। পার্লামেন্টে আইন পাশ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে ইরান থেকে আউট করে দিলো তেহরান।
২৫ জুন বুধবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে ইরানের চুক্তি ও সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ইরানি পার্লামেন্ট। প্রস্তাবটির পক্ষে বিপুল সংখ্যক সংসদ সদস্য ভোট দিয়েছেন এবং এর বিরুদ্ধে একজন প্রতিনিধিও ভোট দেননি।
ইরান কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত বিলটিতে শর্ত দেওয়া হয়েছে যে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা কর্তৃক ভবিষ্যতে যেকোনো পরিদর্শনের জন্য সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে। এক্ষেত্রে পরিদর্শকরা সংস্থাটি যদি দেশের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন, তবেই ইরানে প্রবেশ করতে পারবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্লামেন্টে এই বিল পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ইরানী দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। সংস্থার কোনো পরিদর্শক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় পরিদর্শন করতে চাইলে কঠিন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রসঙ্গটি বিশ্লেষক ও গবেষকদের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। তবে এ সংস্থার কাজ কি- তা বিশ্বের সাধারণ মানুষের এখনো তা এক অজানা বিষয়।
সংস্থাটি ১৯৫৭ সালের ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংস্থাটি বিশ্বে পরমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং সামরিক উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার রোধে কাজ করছে। সংস্থাটির সদর দপ্তর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অবস্থিত।
সংস্থাটিতে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ছাড়াও এ বিষয়ের ওপর বৈজ্ঞানিক ও কারিগরী গবেষণা চালায়। তারা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করে এবং পারমাণবিক প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধের প্রচেষ্টা চালায়। এছাড়া পারমাণবিক নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক নিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন মানদণ্ড প্রণয়ন ও বাস্তবায়নও আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার অন্যতম কাজ।
উল্লেখ্য, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সাম্প্রতিক মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দাবি করছে, তেহরানের পরমাণু সক্ষমতায় বড় আঘাত হেনেছে তারা।
তবে ইরান বলছে, এই হামলায় তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। তাদের ক্ষতি সীমিত এবং কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। ইরান-ইসরাইলের ১২ দিনের যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ইরানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রবেশ ও পরিদর্শন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে সংস্থাটির প্রতিক্রিয়া কি তা এখনো জানা যায়নি।
ইরানের পারমাণবিক ক্ষতি নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় যখন একের পর এক ভিন্নমত প্রকাশিত হচ্ছে, ঠিক তখনই চীনের খ্যাতিমান গবেষক লি চিসিনের একটি মন্তব্য বেশ আলোচনায় আসে। তিনি বলেছেন, পরমাণু জ্ঞান বোমা দিয়ে ধ্বংস করা যায় না। ইরানের পারমাণবিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সহজে মুছে ফেলা যাবে না। ইরানের কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এখন এক প্রকার অন্ধকারেই রয়েছে। এই সংস্থার সাথে ইরানের যে চুক্তি রয়েছে তা ইরান পার্লামেন্টে আইন পাশ করে বাতিল করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার এই অন্ধকার আরো ঘনিভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইরানি সংবাদ মাধ্যম। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিদর্শকরা যে কোনো অজুহাতে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শন করতে পারবেন না। ইরানে প্রবেশ করে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করাও চলবে না।