ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টারে ‘অপচিকিৎসায়’ শিশুর মৃত্যু, ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা
কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে কথিত শিশু বিশেষজ্ঞে’র অপ চিকিৎসায় এক শিশুর অকাল মৃত্যুর গুরুতর অভিযোগে উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
সোমবার (৭ নভেম্বর) ঈদগাঁও থানায় আদালতের নির্দেশে এ মামলা রুজু করা হয়। ডা. নজরুল ইসলাম নামের একজনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
হতভাগ্য এ শিশুর মৃত্যু পরবর্তী তার মা কুলছুমা আকতার বেবী কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঈদগাঁও, এ একটি ফৌজদারী দরখাস্ত দায়ের করেন ।
পরে আদালত দরখাস্তটি নিয়মিত মামলা হিসাবে রুজু করতে ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে জানা যায়, ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ছাতিপাড়া গ্রামের জমির উদ্দীনের তিন বছরের শিশুপুত্র তৌহিদুল ইসলামের শরীরের অধিকাংশ গরম তরকারিতে ঝলসে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ঈদগাহ মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যায় তার মা।
কর্তব্যরত চিকিৎসক নজরুল ইসলাম তাকে ভর্তিপূর্বক কতগুলো ওষুধ প্রেসক্রাইব করে পানি ও খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শিশুটির খিঁচুনি শুরু হয় ও একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
তখন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও পরে ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা। কিন্তু ততক্ষণে শিশুটির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়লে ডাক্তারগণ তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
এদিকে মুমূর্ষু শিশুটির আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি না থাকায় শিশু তৌহিদকে পিপলস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মারা যায় শিশুটি।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী ও বাদী পক্ষের নিয়োজিত অ্যাডভোকেট রমিজ আহমদ বলেন, অভিযুক্ত ডাক্তার নজরুল ইসলাম বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ নন এবং এ বিষয়ে তার কোনো প্রশিক্ষণও নেই। কিন্তু তিনি দগ্ধ শিশুটিকে উপযুক্ত হাসপাতালে রেফার না করে ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি দেন।
সেখানে ভুল চিকিৎসা, অপ্রাসঙ্গিক ও অকার্যকর ওষুধপত্র, তদুপরি অবহেলা এবং অব্যবস্হাপনার মধ্যে রেখে শিশুটির অবস্থার অবনতি হয়। ফলে শিশুটি মৃত্যুবরণ করে, যা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ।
অভিযুক্ত চিকিৎসক নজরুল ইসলামকে বারবার মোবাইলে ফোন করার পরেও ফোন রিসিভ না করায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ঈদগাঁও মেডিক্যাল সেন্টার এন্ড হাসপাতালের পরিচালক এহসানুল হক দাবি করেন। শিশুটিকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কবির বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মামলা রুজু করা হয়েছে।
সাধারণ লোকজনের অভিযোগ, উক্ত চিকিৎসক ডাক্তার নজরুল ইসলাম শিশু বিশেষজ্ঞ না হওয়ার পরও শিশু রোগীর অভিভাবকদের তার প্রতি আকৃষ্ট করতে বছরের পর বছর তার নেইমপ্লেটে ডিগ্রি’র স্থানে এফসিপিএস পার্ট- ২ (শিশু) লিখে সাধারণ জনগণের সাথে প্রতারণা করে আসছে।দেরিতে হলেও তার এ অপচিকিৎসার বলি হল হতভাগা এ শিশু। এরুপ ঈদগাঁও’র বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসক রয়েছে।