ঈদের দিন আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গারা কী করেন?

fec-image

২০১৭ সালে যখন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়, তখন প্রথম দিকের ঈদ উৎসবে ক্যাম্প এলাকাজুড়ে ছিল কান্নার রোল। নিজ বাসস্থান ছেড়ে এসে ভিনদেশে একটা ক্যাম্পের মধ্যে ঈদের আনন্দ বলে কিছু ছিল না তাদের। এখন সাত বছর পর পরিস্থিতি বদলেছে। ঈদের দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের নামাজে এখন আর কান্নার রোল পড়ে না, তবে বিষণ্ণতা থাকে বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝে।

বেসরকারি সংস্থাগুলো কোরবানি ঈদে ক্যাম্পে পশু কোরবানির ব্যবস্থা করে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলো নিজেদের আয়োজনে সাজিয়ে থাকে, নামাজের জায়গা পরিচ্ছন্ন করে কিছু কাগজ কেটে সাজাতেও দেখা যায়। সব মিলিয়ে ঈদের দিন ও পরের দিন উৎসবের আমেজে কাটে তাদের। ক্যাম্পের বয়োজ্যেষ্ঠরা বলছেন, ঈদে বার্মা থাকতে তারা পুরো এলাকা জরি দিয়ে সাজাতেন। নানা রকম মিষ্টান্ন রান্না হতো। সে উৎসব তাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেখতে পারবে না ভাবলেই চোখ ভিজে আসে।

বিশ্বে নজিরবিহীন নির্যাতনের শিকার এই রোহিঙ্গাদের প্রথম ঈদের বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্যাম্প ফোর এক্সটেনশন নিবাসী রাবেয়া গুলবাহার বলেন, ‘কখনও ভাবিনি এরকম বন্দি এলাকায় আত্মীয়-স্বজনবিহীন নিরানন্দ ঈদ কাটাতে হবে। সেবার ঈদে নামাজের জামাত হয়েছিল। কিন্তু এমন কেউ ছিল না যারা কান্নায় ভেঙে পড়েনি। মসজিদে মসজিদে মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম ফিরে যাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছেন। এখন এত বছর পর আমরা বুঝতে পারছি, চাইলেও ফিরে যাওয়ার রাস্তা নেই। তাই এখন দিনটা আমাদের সন্তানদের নিয়ে ভালো কাটানোর চেষ্টা করি। এখন নতুন আত্মীয়ও হয়েছে। আমরা এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে যাই। ভালো-মন্দ রান্নার সুযোগ আছে। নিজেদের মানিয়ে নিয়েছি।’

বালুখালী ক্যাম্পের দোকানদার বায়তুল বলেন, ঈদকে ঘিরে কিশোরীদের উচ্ছ্বাসের গল্প। তিনি বলেন, ঈদে এমন কেউ নেই যে মেহেদি কিনে না। অন্যান্য সময়ের তুলনায় তিনগুণ মেহেদি দোকানে তুলতে হয় তাকে। কিশোরীরাই ক্রেতা বেশি উল্লেখ করে বায়তুল বলেন, রোহিঙ্গা মেয়েরা সারা বছরই মেহেদি পরে। খেয়াল করে দেখবেন, এটা তাদের সাজের অপরিহার্য জিনিস। আর ঈদের আগে তো কথাই নেই। তবে শুরুর দুই বছর এসব দেখা যায়নি। তখন কোনটা ঘর আর কে পর সেসব নিয়ে মানুষ শঙ্কায় ছিল। এখন এখানেই মানিয়ে নিয়েছে।

ক্যাম্পের কিশোরীদের ঈদ উৎসবের বড় অংশজুড়ে থাকে একে-অপরকে মেহেদি পরানো, আর সাজগোজের নানা জিনিস কেনা। কুতুপালং বাজারে মেহেদি কিনতে আসা রোকাইয়ার হাতে মেহেদি পরা। তারপরেও তিনি দোকান থেকে মেহেদি কিনছেন। কার জন্য কিনছেন জানতে চাইলে বলেন, এখান থেকে ১০টা কিনে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি করে দেবেন। আর দুটো থাকবে তার তিন বোনের হাতে পরানোর জন্য।

ঘরে ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছানোর আগেই দুপুরে খাওয়ার জন্য কিছু মাংস কেনা হয়। কিছু না হলেও মুরগির ব্যবস্থা থাকে এই দিনে। আর নানা ধরনের ঘরে বানানো মিষ্টান্ন থাকে। কিন্তু যেহেতু গ্যাস ব্যবহারে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা আছে, ফলে যত খুশি থাক না কেন, রান্না থেকে নিজেরা বিরত থাকতে হয়।

এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ক্যাম্পের আশপাশে গরু ও খাসি কেনাবেচা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে হাটে তাদের পশু কিনতে দেখা গেছে। উখিয়ার কুতুপালং টিভিকেন্দ্র সংলগ্ন কোরবানির পশুর হাট থেকে রোহিঙ্গা সমাজের নেতৃস্থানীয় কিছু ব্যক্তি পশু কিনেছেন। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে এবার ২ হাজার ২০০টির বেশি পশু কোরবানির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ-দ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘সাধারণত ইসলামি বিদেশি সংস্থাগুলো বড় দায়িত্ব পালন করে। এবারও তাদের উদ্যোগে সব ক্যাম্পের জন্য ২ হাজার ২০০টির বেশি পশু কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ঈদের পরের দিনে টার্কিস এনজিওগুলো থেকে প্যাকেটজাত মাংস দেওয়ার কথা আছে। সব মিলিয়ে তারা ঈদের আমেজে থাকেন।

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন