কক্সবাজারের বালিতে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে লক্ষ কোটি টাকার কালো সোনা
আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার
কক্সবাজারের একশো’ বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা লক্ষ কোটি টাকার কালো সোনা তথা খনিজ সম্পদ বিক্রি করে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষীয় অবহেলা ও অদক্ষতার জন্য কোটি কোটি টাকার মূল্যবান খনিজ সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে এবং সমুদ্রের অতল গর্ভে তলিয়ে গেছে।
পর্যটন নগরী কক্সবাজার সৈকতের নাজিরটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সৈকতের বালিতে লক্ষ কোটি টাকারও বেশি দামের বিপুল পরিমাণ খনিজ পদার্থ মজুত রয়েছে।
বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন সুত্র জানিয়েছেন, সৈকত বালিতে মোট খনিজের প্রাক্কলিত মজুতের পরিমাণ ৪৪ লাখ (৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন) টন। প্রকৃত সমৃদ্ধ খনিজের পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টন (এক দশমিক ৭৫ মিলিয়ন)।
বিশ্ববাজারে উচ্চ চাহিদাধর্মী মজুত আকরিক রফতানি করতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মূল্যবান খনিজ বালি জিরকন, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও রুটাইল উত্তোলন করা যেতে পারে। আগেই অস্ট্রেলিয়া সরকার এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
১৯৬০ সালে কক্সবাজারে এই খনিজ সম্পদের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় এবং পরে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন (বিএইসি) বিভিন্ন গবেষণা শুরু করে। ১৯৭০ দশকের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া সরকার একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে বাংলাদেশে একটি পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দেয়। সমুদ্রের বেলাভূমি থেকে খনিজ সম্পদ পৃথকীকরণ করে তা আহরণের জন্য ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলীয় সরকারের সহায়তায় কক্সবাজারে একটি পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, আদৌ তারা কোনো গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ কাজ করতে পারেনি এবং তারা সম্পূণরূপে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে মূল্যবান খনিজ সম্পদ ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘদিনের গাফেলতি কাটিয়ে খনিজ উত্তোলনে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতির উর্ধ্বে থেকে প্রয়োজনীয় জনবলকে কাজে লাগাতে হবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজারে সি বিচ এক্সট্রাকশন সেন্টারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে খনিজ সম্পদ পরীক্ষামূলকভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে এবং এই সম্পদ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার কাছে চাহিদা অনুযায়ী ক্ষুদ্র পরিসরে বিক্রি করা হচ্ছে।
তারা বলছেন, মূল্যবান খনিজ সম্পদ শুধু কক্সবাজার এলাকাতেই নয়, বাংলাদশের বিভিন্ন সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায়ও মজুদ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দাবী করেন, সংশিস্নষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ যথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ, ব্যুরো অফ মিনারেলস, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইত্যাদির একটি সমন্বয় সভার আয়োজন করা হোক এবং বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা ও বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হলে এই খনিজ সম্পদ কক্সবাজার তথা বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে পারে।