কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্বপ্ন দেখছে হাজারো তরুণ-যুবক
নানামুখী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বেকার যুবাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আত্মনির্ভরশীল ও সমাজে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ভিন্ন রকম ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে কক্সবাজারের উদ্যমী তরুণদের সংগঠন চকরিয়া যুব পরিষদ। ইতিমধ্যে এই সংগঠন ভিন্ন আঙ্গিকে বেশকিছু ইতিবাচক কাজ করে জেলার মধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।
বিশেষ করে বেকার যুবকদের নানামুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এতে হাজারো যুবক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বেকারদের হতাশার জীবনের চাকা ঘুরিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে তাদের জীবনমান। দেশের উন্নতি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সাধনে সরকারের ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী দেশকে সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ উন্নত দেশে পরিণত করার অংশ হিসেবেই যুব সমাজকে জনসম্পদে রূপান্তর করার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে চকরিয়া যুব পরিষদ। নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভিন্ন ভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এই সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই তরুণ যুব সমাজকে কর্মের মাধ্যমে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘চকরিয়া যুব পরিষদ’। অত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানজিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণ যুবক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনাসুদে ক্ষুদ্রঋণ ও যুব ঋণ সহযোগিতা গ্রহণ করে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। যার ফলে চকরিয়া উপজেলায় অনেকটা বেকারত্বের হার কমে এসেছে।
উপজেলার মধ্যে উঠতি বয়সের প্রায় যুবক শিক্ষিত। শিক্ষার আলোতে যুবকেরা আলোকিত হলেও কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক শিক্ষিত যুব সমাজ ছিল বেকার। দেখা গেছে, বহু শিক্ষিত যুবক শিক্ষার আলো বুকে ধারণ করে সম্মানের তাগিদে পারছে না দিনমজুরের কাজ করতে, না পারছে তাদের পছন্দনীয় কোন চাকরি নিতে। এমন সময়ে চকরিয়া যুব পরিষদ তাদের কর্মকাণ্ড শুধু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, ছড়িয়ে দিয়েছে সমাজ ও ক্রীড়া উন্নয়নে।
ইতিমধ্যে অত্র সংগঠন সমাজ ও ক্রীড়া উন্নয়নে যে সকল কাজ সম্পাদন করেছে তাও অবর্ণনীয়। এই উপজেলার বিপুল যুব সমাজকে জনসম্পদে রূপান্তর করার লক্ষ্যে যুব পরিষদ জীবনমান উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত নানা প্রশিক্ষণ কর্মশালা করছে নিয়মিত। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ, সেলাই, ব্লক, বাটিক, ইলেকট্রিক্যাল ও ওয়েডিং প্রশিক্ষণ, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, কবুতর পালন, সবজি চাষ, মাশরুম চাষসহ মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নানা ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। সেই আলোকে চকরিয়া যুব পরিষদের নেতৃত্বে ৮৫২ জন বেকার যুবক প্রশিক্ষীত হয়েছে, যার মধ্যে ৮০ জন কম্পিউটার এবং ১০০ জন কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
সংগঠনের তথ্যমতে, যুব নেতৃত্বের বিকাশে ভূমিকা শীর্ষক নানা আলোচনা সভা করা হয়। এছাড়াও ‘পেঁপে চাষ’ ও ‘টি স্টোর’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বেকার যুবদের কর্মক্ষেত্র উদ্ভাবন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গতি সঞ্চার, পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, নিরক্ষরতা দূরীকরণে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান এবং লাইব্রেরি স্থাপন, তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তি উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে উৎসাহ প্রদান, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় প্রশাসনকে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান, ধূমপান ও মাদকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, এসটিডি ও এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, এলাকায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক বিরোধী আন্দোলনে সচেতনতা সৃষ্টিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবামূলক কর্মসূচিতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে সহযোগিতা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবামূলক কার্যক্রম, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু/ব্যক্তির উন্নয়নে হুইল চেয়ার বিতরণ, ক্রীড়া উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা ইত্যাদি।
সমাজ ও যুব উন্নয়নমূলক উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- পথশিশুদের ঈদ বস্ত্র বিতরণ, মহামারি তথা করোনাকালীন সময়ে খাদ্য সরবরাহ, মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি সম্পাদন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, করোনাকালীন দুর্দিনে কর্মহীন যুবকদের উপহার সামগ্রী বিতরণ, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করতে ‘গোল্ডেন মৎস্য’ চাষ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ক্রীড়া উন্নয়নে জেলা ক্রীড়া অফিসের মাধ্যমে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট বাস্তবায়ন।
উল্লেখ্য যে, বেকার যুবকদের জীবন দক্ষতা উন্নয়ন, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, যুব নেতৃত্বের বিকাশ, ক্রীড়া উন্নয়ন ও সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে চকরিয় যুব পরিষদকে উপজেলার শ্রেষ্ঠ সংগঠন ও ২০২১ সালের ১ নভেম্বর জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে জেলার শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠনের পুরস্কার লাভ করেন।
চকরিয়া যুব পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও তরুণ উদ্যোক্তা তানজিনুল ইসলাম বলেন, ‘যুব সংগঠন সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে যুব সমাজ সংগঠিত হয়ে সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান করলে গোটা দেশের প্রতিটি গ্রামীণ সমাজ সামাজিক অনাচার থেকে মুক্ত হবে। যার প্রেক্ষিতে শান্তি বিরাজ করবে প্রতিটি সমাজে, বৃদ্ধি পাবে পারস্পরিক সহযোগিতা, নির্ভরশীলতা। এছাড়াও বৃদ্ধি পাবে প্রাকৃতিক ভাবে সম্পদের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ, বেকারমুক্ত হবে যুব সমাজ।