গুইমারায় প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির উৎসব


খাগড়াছড়ির গুইমারায় অবৈধভাবে সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দৃষ্টি নন্দন পাহাড়টি কেটে মাটি বিক্রির উৎসব চলছে । কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্টরা।
অর্ধশতবর্ষীয় বটগাছটি কেটে লাকড়ি হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি হচ্ছে হাজার থেকে বারশত টাকায়। অথচ ওই বিদ্যালয়ের মূল দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সাধারণ কোন ব্যক্তি পাহাড় বা মাটি কাটলে যিনি নির্বাহী মেজিস্ট্রেট হিসেবে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। কিন্তু যে পাহাড়টি কাটছে তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে গুইমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ।
ওই পাহাড়টি কাটার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার পাশ নিচু হচ্ছে। মাঝখানে একটি পাহাড়ের উপর তিন তলা একটি ভবন সহ মোট ৪টি ভবন দাঁড়িয়ে রয়েছে।
স্থানয়ীরা বলছেন , উপজেলা প্রশাসনের পাহাড় কাটার বিষয়ে আইন ও বিধি নিষেধ শুধু সাধারণ মানুষের জন্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪২৭ জন কোমলমতি ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে । মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাহাড়টি যেভাবে কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে যে কোন সময় ধসে পড়তে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। তারা জানতে চায় তখন এর দায় কে নিবে।
তাছাড়া যে বিদ্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই বিদ্যালয়ের পাহাড় কেটে মাটি ব্রিক্রি হচ্ছে তার পক্ষ থেকে কোন আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বা বন্ধ করা হযনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রভাবশালীদের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, ওরা বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ বাদী হিসেবে পাহাড় কাটতে নিষেধ করেন । স্কুলের ছেলে মেয়েদের নিয়ে পাহাড় কাটারোধ, পাহাড় ধস পরিবেশবাদী সভা সেমিনার ও র্যালি করেন। অপরদিকে পাহাড় ধসে বাড়িঘর বিধস্ত, পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ করে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা।
স্থানীয়রা বলেন, পাহাড় ধসের মূলে রয়েছে প্রভাবশালীদের নেতৃতে যত্রতত্র পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা। যখন পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হয় তখন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিরব থাকেন। কারণ এসব কর্মকর্তাদের বাড়ি পাহাড়ে নয়। পাহাড় ধস রোধে পাহাড় কাটা বন্ধ না করে টানা বৃষ্টি হলেই তড়ি ঘড়ি শুরু হয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের।
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষরা ঠকেই যাচ্ছে এসব প্রভাবশালী পাহাড়ের মাটি বিক্রেতাদের কাছে । তাদের প্রভাবের কাছে অনেক সময় নতজানু হয়ে যায় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও।
স্বরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গুইমারা উপজেলার কাছেই মহাসড়ক সংলগ্ন অবস্থিত মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন তৈরি সহ বিভিন্ন অজুহাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল রঞ্জন পাল ও তার মদদ দাতাদের নিয়ে দৃষ্টি নান্দনিক এ পাহাড়টি কেটে মাটি বিক্রি করছেন ।স্থানীয়রা অনুরোধ করার পরও কেটেছেন অর্ধশতবর্ষীয় বটগাছটি ।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল রঞ্জন পাল পাবত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দোহাই দিয়ে বলেন, তিনি পাহাড়টি কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেশের বাহিরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
দুই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, গুইমারা কলেজিয়েট স্কুলটি নতুন হওয়ায় সেখানে শিক্ষকের সংকট তাই তিনি অস্থায়ী দায়িত্ব পালন করছেন। তবে অন্য কোন শিক্ষক কলেজিয়েটে শিক্ষকতা করেননা।
তবে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষন কান্তি দাশ জানান, যদিও তিনি স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন তবু পাহাড় কাটা এবং মাটি বিক্রির বিষয়ে তিনি অবগত নন।