ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভূমিধস সহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

fec-image

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ উপকূলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে সংকেত বাড়তে থাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে আটকা পড়েছে প্রায় ১২শত পর্যটক। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভূমিধস ও ঝুপড়ি ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।

তবে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা ও অন্যান্য স্থানে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে। তবে, বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে উপজেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। শুক্রবার বিকালে আয়োজিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় এসব কথা জানানো হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পূর্বের অভিজ্ঞতায় বলা যায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তীব্রতা শুরু ক্যাম্পে রোহিঙ্গার আবাসস্থলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। উপড়ে যেতে পারে ঝুপড়িগুলো। সেসব মোকাবেলায় ক্যাম্পে কাজ করা আইএনজি, এনজিও এবং জিও গুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোলান্টিয়ারগণ নিজ নিজ ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের সবাইকে সমন্বয় করতে প্রস্তুতি নিয়ে আছে সেনাবাহিনীর বিশেষ টিম। এ বিষয়ে দুপুরে ক্যাম্প এলাকায় বৈঠকও করেছে সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে উপকুলে অবস্থানকারী স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে বলে দেওয়া হয়েছে। আর যে সমস্ত লোকজন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রয়েছে তাদেরকেও নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে বলা হয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ঝুপড়িতে বসবাসকৃত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৭ নম্বর বুলেটিন বলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার ৬নং সংকেত বলবৎ। কিন্তু নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংকেত ক্রমে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভূমিধসের আশঙ্কা আছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ গণমাধ্যমকে শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২০ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিমি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার (০৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের কাছ দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার ভোর থেকে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিমি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজ এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিন্মঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট ২২টি মন্ত্রলণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটার এলাকায় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করলে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে সাতটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন