চকরিয়ায় খুটাখালীতে একাধিক পয়েন্টে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন
![fec-image](https://www.parbattanews.com/wp-content/uploads/2024/12/InShot_20241207_173803438.jpg)
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীতে বিভিন্ন নদী, ছড়াখাল ও বনবিভাগের ঝিরিতে অন্তত ৭-৮টি পয়েন্টে দিব্যি চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসন থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হলেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে ভেঙে যাচ্ছে নদী ও খালের পাড়। বিশেষ করে চরম হুমকির মুখে পড়েছে বেড়িবাঁধ ও লবণের মাঠ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী-মার্চের দিকে উপজেলা প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে খুটাখালীতে বনবিভাগসহ বিভিন্ন পয়েন্ট সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ও মাইকিং করে বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রশাশনের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এতে অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায় বালু উত্তোলন। তৎসময়ের প্রশাসনের দায়িত্বরত ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অন্যত্রে বদলি হয়ে চলে যাওয়ার পরে ফের শুরু হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে স্থানীয় বেশকিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী দলের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের হিড়িকে নেমে পড়ে। স্থানীয় প্রভাবশালী ওই বালু ব্যবসায়ীরা কৌশলে রাতভর বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। খুটাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন নদ-নদী, শাখা খাল ও বনবিভাগের ঝিরির অন্তত ৭-৮টি স্থানে দিব্যি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না।
সরেজমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মেধের খাল, খুটাখালী ছড়ার মূখ, তলীয়া ঘোনা এলাকায় স্যালোমেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন স্থানীয় এরশাদসহ তার ২জন সহপাঠী। ওই স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে এতে ধসে পড়ার মূখে পড়েছে খালের বেড়িবাঁধ ও চিংড়ি ঘেরসহ লবণ মাঠের বাঁধ। এ ছাড়াও ছাগল খাইয়া চিংড়ি ঘের, তলীয়া খাল সংলগ্ন ছড়াঘোনা, মাষ্টার ঘোনার মাঝখানের খাল থেকে স্যালোমেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে আব্দুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ও ছাবের আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়, ওইসব স্থান ছড়াও স্যালোমেশিন বসিয়ে দিব্যি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে খুটাখালীর রাবার ড্যামের নিচে ছড়ার মূখ এলাকায়। ওই স্থানে বালু উত্তোলনে রায়হান, আলী আহমদ ও সোলতান আহমদ জড়িত রয়েছে বলে জানান স্থানীয় ও চাষিরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ বালু উত্তোলনে যারা জড়িত রয়েছে তারা রাতদিন স্যালোমেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ছোট ছোট টেম্পু বোট যোগে নদী পথে এসব বালু বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। এ অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বিশেষ করে মেধের খালের বেড়িবাঁধ ও মসজিদ ঘাটার চিংড়ি ঘের এবং লবণ মাঠের বাঁধের ব্যাপক ফাটল সৃষ্টি হয়। যেকোন মূহুর্তে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ফেলে কিংবা অতিভারি বর্ষণ হলে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এ বাঁধের। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মূখিন হবে চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষিরা। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমনটা দাবি করেছেন স্থানীয়রা। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও লবণ চাষিরা।
অবৈধ বালু উত্তোলন কাজে যারা জড়িত রয়েছে তাদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, মূলত কর্ম না থাকায় ও পেটের দায়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে সংসার চালানো হচ্ছে এমনটা দাবি করেছেন তারা।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান কাছে অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন থেকে মাইকিং করে জানানো হবে। তাছাড়া অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ রাখতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। সে যেই হোক, বালু উত্তোলন বন্ধসহ উত্তোলনকারীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।