চাকমারকূল ক্যাম্পের হেড মাঝির চাঁদাবাজি : অতিষ্ঠ সাধারণ রোহিঙ্গারা
উখিয়ার পাশ্ববর্তী হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল ক্যাম্পে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে হেড মাঝি ত্বোহা’র সন্ত্রাসী বাহিনী। ভয়ে, আতঙ্কে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। যার ফলে পুরো ক্যাম্প জুড়ে তাদের আধিপত্য। এমন অভিযোগ সাধারণ রোহিঙ্গাদের।
সরজমিন চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের চোখে মুখে যেন এক অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। কথা বলতে চাইলে কেউ এগিয়ে আসছেনা।
অনেক কৌশলের মাধ্যমে কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা অনেকটা জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। কারণ সম্পর্কে তারা বলেন, ওই ক্যাম্পের হেড মাঝি ত্বোহা এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে তারা। ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) সিরাজুল হকের নাম ব্যবহার করে ত্বোহা’র বাহিনীর সাধারণ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে এনজিও কর্তৃক দেয়া ত্রাণ মালামাল থেকে শুরু করে নগদ অর্থে ভাগ বসাতে শুরু করেছে৷ কেউ যদি অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে তাকে জহির আহমদের মতো পরিনতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেন ত্বোহা বাহিনী।
জহির সম্প্রতি ত্বোহা বাহিনী নির্মম হত্যার শিকার একজন রোহিঙ্গা। সে হেড মাঝি ত্বোহার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হন।
এছাড়াও ত্বোহার রয়েছে বিশাল গোপন আস্তানা, যেখানে শত শত সশ্বস্ত্র রোহিঙ্গাদের অবস্থান। বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গারা আরও জানান, কিছু দিন পূর্বে কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘঠিত ঘটনার মূলহোতারা ত্বোহার ওই আস্তানা আশ্রয় নিয়ে আছে। গত ২সপ্তাহ পূর্বে চাকমারকুলের পাহাড়ি এলাকা অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ৯ জন রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি দেশি অস্ত্র, ২০ রাউন্ড কার্তুজ, ধারালো কিরিচ, লোহার রড ও গুলতি উদ্ধার করে৷
আটককৃতরা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। তারা সবাই কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে ‘গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত ছিল বলে জানায় র্যাব।
হেড মাঝি ত্বোহা ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারের নিকট থেকে জিম্মি করে কয়দিন আগে এনজিও দেওয়া সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে সহকারী সিআইসি সিরাজুল হক’কে দেয়ার কথা বলে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয় হেড মাঝি ত্বোহা। সে ওই সময় এই কথা কাউকে না বলার জন্য রোহিঙ্গাদের হুমকি দেন৷
ত্বোহা বাহিনী ইয়াবা ও হুন্ডির সাথেও জড়িত। মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় হুন্ডি সম্রাটের সাথে তার রয়েছে সখ্যতা৷ হন্ডি মাধ্যমে মিয়ারমার থেকে সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসছে ইয়াবা। ত্বোহা ছাড়াও এদের মধ্যে রয়েছে আতাউল্লাহ মাঝি (৩৮) জুবায়ের(২৯) ও মাস্টার ছৈয়দ সালামসহ অনেকে।
অভিযুক্ত হেড মাঝি ত্বোহা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আরসা নামক কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আমি হেড মাঝি হওয়ার পর বের করে দিয়েছি, তারা এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমি এসব কাজের সাথে জড়িত নয়।
চাকমারকুল ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) সিরাজুল হক বলেন, আমার নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ এ ধরনের অপকর্ম করে থাকে তাহলে যে গুলো তার একান্ত বিষয়। আর আমি অবশ্যই তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
সিআইসি রাশেদুল হাসান বলেন, আমার অফিস সব সময় খোলা। এ পর্যন্ত এই সংক্রান্ত কোন অভিযোগ করেনি রোহিঙ্গারা। অভিযোগ পেলে অবশ্যই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।