চীনে করোনায় দিনে ৯ হাজার মৃত্যু হচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের ধারণা

fec-image

চীনে নতুন করে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। দেশটিতে দৈনিক প্রায় ৯ হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে বলে ধারণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। খবর: দ্য গার্ডিয়ানের।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত চীনে কোভিডজনিত অসুস্থতায় মোট মৃত্যু হয়েছে অন্তত এক লাখ এবং করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ।

চীনের বিভিন্ন প্রদেশে করোনার সংক্রমণ-মৃত্যুর তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করা হচ্ছে উল্লেখ করে এয়ারফিনিটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে—বর্তমানে চীনে করোনায় সংক্রমণ-মৃত্যুর যে হার, তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০২৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে এই রোগে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে এবং ডিসেম্বর ও জানুয়ারি— দু’মাসে দেশটিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছাবে ৫ লাখ ৮৪ হাজারে এবং এপ্রিল নাগাদ এই সংখ্যা ১৭ লাখে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বরে এয়ারফিনিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, শিগগিরই প্রতিদিন ১০ লাখ নতুন আক্রান্ত রোগী ও ৫ হাজার মৃত্যু দেখার ঝুঁকিতে আছে চীন।২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারি ঘোষণার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনেও দীর্ঘ লকডাউন, সামাজিক দূরত্ববিধি, বাড়ির বাইরে গেলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনসহ কঠোর সব করোনা বিধি জারি করেছিল।

গত ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে অধিকাংশ দেশ করোনা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া শুরু করলেও চীন তার আগের অবস্থানে অনড় ছিল চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত। করোনার বিরুদ্ধে চীন সরকারের এই কঠোর অবস্থান পরিচিতি পায় ‘জিরো কোভিড’ নীতি হিসেবে।
তার সুফলও অবশ্য পাওয়া যাচ্ছিল। মহামারির দুই বছরে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত ও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে— সেখানে চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই সময়সীমার মধ্যে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩৩ হাজারের কিছু বেশি মানুষ এবং মৃত্যু ছিল এক হাজারের কিছু ওপরে।

কিন্তু আড়াই বছরেরও বেশি সময়ে কঠোর করোনাবিধির মধ্যে থাকার জেরে অতিষ্ঠ চীনের সাধারণ জনগণ গত নভেম্বরের শেষদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। জনগণের এই বিক্ষোভের পর চলতি ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসে দেশটির সরকার।
তার পর থেকেই দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের ভিড়ে উপচে পড়ছে এবং অনেক ওষুধের দোকানে করোনার ওষুধের যোগান শেষ হয়ে গেছে।
চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিএফ পয়েন্ট সেভেন নামের একটি করোনাভাইরাস সাম্প্রতিক এই ঢেউয়ের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসটি করোনার সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের একটি উপপ্রজাতি।

তবে করোনার সাম্প্রতিক এই ঢেউ সম্পর্কে চীনের সরকার তেমন কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না। গত ২৮ ডিসেম্বর দেশটির সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে ২০২০ সালে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত চীনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে মোট ৫ হাজার ২৪৬ জনের।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনা, চীন, বিশেষজ্ঞ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন