ডিবিকে তদন্ত ও গাফেলতিতে ওসিকে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ আদালতের
খাগড়াছড়ি’র পানছড়ি সীমান্ত সড়কে দিনের আলোতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ৪টি সরকারি ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙ্গে রড লুটের ঘটনায় আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে ডিবিকে তদন্তে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে চাঞ্চল্যকর ও সংবেদনশীল ঘটনায় পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদের দায়িত্বশলীতার অভাব ছিল বলেও উল্লেখ করে তাকে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতেও স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে খাগড়াছড়ির পানছড়ির সীমান্ত সড়কে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত ৪টি পাকা কালভার্ট ভেঙ্গে রড খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। টানা সাতদিন ধরে একদল যুবক কালভার্টগুলো ভেঙ্গে গাড়িতে করে রড নিয়ে যায়। আর দিনে-দুপুরে ঘটনাটি ঘটলেও এখনো জড়িতদের খুঁজে বের করতে পারেনি প্রশাসন। বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে আসলে প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে। অবশেষে পানছড়ির ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুস সালাম গত ৯ মার্চ পানছড়ি থানায় একটি জিডি করলেও সেখানে জড়িতদের নাম উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া জিডিতে রডগুলো রাতে চুরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী জানিয়েছে, রাতে নয়, দিনের বেলায় টানা পাঁচ দিন কালভার্ট ভেঙে গাড়িতে করে রড নিয়ে গেছে
এ নিয়ে গত ২৫ মার্চ পার্বত্যনিউজ অনলাইনে “খাগড়াছড়ি সীমান্ত সড়কে ৪টি কালভার্ট ভেঙ্গে রড নিয়ে গেলো দুর্বৃত্তরা” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং ডিজিটাল মিডিয়াতে ভিডিও নিউজ প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ ও প্রচার হলে বিষয়টি নজড়ে আসে আদালতের।
গত ২৯ মার্চ খাগড়াছড়ির আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিএম ফারহান ইসতিয়াক বাদী হয়ে মিস মামলা (মামলা নং ২/২০২৩) করে একটি আদেশ দেন। আদেশে তিনি খাগড়াছড়ির জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ পরিদর্শককে অতিসত্বর ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহসহ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্তপূর্বক আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর ও সংবেদনশীল ঘটনায় পানছড়ি থানার ওসি মো. হারুনুর রশিদের দায়িত্বশলীতার অভাব ছিল বলেও উল্লেখ করে তাকে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতেও নির্দেশ দেন।
খাগড়াছড়ি জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ পরিদর্শক মো. সামসুজ্জামান জানান, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই ডিবি তদন্ত শুরু করেছে ও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে জেলার পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী লোগাং ইউনিয়নের লোগাং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছনখোলা রাস্তর মাঝখানে বাবুইন্যার জমির ছড়াতে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়। একই অর্থবছরে চেঙ্গী ইউনিয়নের অমরেন্দ্রপাড়া থেকে দুর্গামনিপাড়া যাওয়ার রাস্তায় শ্রীকুন্তিমা ছড়ার ওপর একই দৈর্ঘ্যের আরেকটি কালভার্ট নির্মাণ করে পিআইও কার্যালয়।
দুটি কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় হয় ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৮০৮ টাকা। এসব এলাকা দিয়ে সম্প্রতি সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করায় কালভার্ট দুটি অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
একটি সূত্র জানায়, পানছড়িতে পাকা কালভার্ট ভেঙ্গে রড খুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সরকারি দলের জনৈক প্রভাবশালী নেতা জড়িত।
পানছড়ির লোগাং গ্রামের অমিত বরণ চাকমার অভিযোগ, দিন-দুপরে শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে কালভাটের রডগুলো খুলে নিয়েছেন উত্তম কুমারের লোকজন।
পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে ভাঙারী মো. ইসমাইল হোসেনকে ভাড়া করে ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব কালভার্টগুলো ভেঙ্গে রডগুলো নিয়ে গেছে। এটা প্রত্যক্ষদর্শী দেখেছে। কাজেই ইসমাইলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব তথ্য পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, উত্তম কুমার দেব পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বড় ভাই বিজয় কুমার দেব পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তম কুমার দেব বলেন, ‘এটা কিছু লোকের প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মজিবুল আলম জানান, হারুবিল-কচুছড়ি এলাকায় যাওয়ার রাস্তায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থে নির্মিত একটি কালভার্টের রড চুরি হয়ে গেছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এ ঘটনার সাথেও একই চক্র জড়িত।
পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাব দেব বলেন, কারা দিনে-দুপুরে সরকারি কালভার্ট ভেঙ্গে রড নিয়ে গেছে, তা প্রশাসন ও জনগণ সবাই জানে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিচার দাবি করেন।