তিন সশস্ত্র গোষ্ঠির সংঘর্ষে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে আতঙ্ক


বাংলাদেশ বান্দরবান সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আবারও সশস্ত্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে আরাকান আর্মি , আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন —এই তিনটি গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের জেরে সীমান্তবর্তী এলাকায় চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার রাত ৮টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তসংলগ্ন চাকমাপাড়া পয়েন্টে, আন্তর্জাতিক সীমানার ৩৪ নম্বর পিলার থেকে প্রায় ৩০০–৪০০ মিটার মিয়ানমারের ভেতরে প্রবল গোলাগুলি শুরু হয়। রাতজুড়ে থেমে থেমে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়, যার ফলে সীমান্তের উভয় পাশে বসবাসকারী মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির আহমেদ বলেন, ‘রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে গুলি শুরু হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল কেউ আতশবাজি ফাটাচ্ছে, পরে বুঝি ওটা আসলে গোলাগুলি। সারা রাত ঘরে বসেই কাটিয়েছি, পরিবারের সবাই ভয়ে ছিল।’
পরিস্থিতির অবনতি আশঙ্কায় অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র সরে গেছে। সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে মিয়ানমারের লংপংপাড়া এলাকায় আরাকান আর্মি ও আরসার মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সেই সংঘর্ষের প্রভাব ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়ে বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আলীকদম উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাতেও গুলির শব্দ শোনা যায়।
রামু ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষটি মূলত ৫৫ ও ৫৬ নম্বর সীমান্ত পিলারের মধ্যবর্তী এলাকায় এবং বুচিডং সীমান্ত চৌকির অঞ্চলে ঘটছে। ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পোয়ামুহুরী ও বুচিডং চৌকির শূন্যরেখার ওপারে সংঘর্ষ চলছে। আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছি।’
অন্যদিকে কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম জানান, ‘মিয়ানমারের ভেতরে তিনটি গোষ্ঠীর সংঘর্ষের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। আমাদের সীমান্তে কোনো সরাসরি সংঘর্ষ না হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার সীমান্তঘেঁষা কুরিকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকাতেও একই ধরনের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে অন্তত চারবার সেখানে গুলির শব্দ শোনা গেছে।
সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ৩৪ থেকে ৫৭ পর্যন্ত বিস্তৃত অংশটি দীর্ঘদিন ধরে গরু ও মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে টানাপোড়েনই সাম্প্রতিক সংঘর্ষের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

















