কেএনএফের কারণে থানচির পর্যটক সংশ্লিষ্টরা কর্মহীন হয়ে নিরবে কাঁদছে

fec-image

বান্দরবানে থানচি উপজেলার পর্যটক সংশ্লিষ্টরা অনেকে কর্মহীন হয়ে নিরবে কাঁদছে। সরকারকে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আবেদন জানালেন পর্যটনের সংশ্লিষ্টরা । পর্যটক ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকলে বান্দরবানে থানচি রুমা রোয়াংছড়ি তিন উপজেলা ব্যাপী সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন অনেকে। তাই এখানকার মানুষের আয়-রোজগারের কথা বিবেচনা করে তুলে নেয়ার জরুরি হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, গত অক্টোবর ২০২২ থেকে মে ২০২৩ পর্যন্ত ৮ মাস যাবত বান্দরবানে থানচি রুমা রোয়াংছড়ি ৩ উপজেলা কুকিচিং ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) শসস্ত্র সংগঠনটি সমতলের অবস্থানরত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ, সাধারণ মানুষকে অপহরণ, মুক্তিপণসহ নানা অপকর্মের কারণে জনমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন বিদেশি ও দেশীয় পর্যটকদের তিন উপজেলার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় জারি করা হয়।

তখন থেকে তিন উপজেলা শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট ও গেস্টহাউসগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলার ৫ শতাধিক পর্যটক পথ প্রদর্শক পরিবার, ৫ শতাধিক ইঞ্জিন চালিত বোটচালক পরিবার, শতাধিক ছোটযান পরিবহন শ্রমিকসহ জীবিকার তাগিদে অনেকে পেশা বদলে চলে গেছেন অন্যত্র। এ অবস্থা চলতে থাকলে তিন উপজেলার পর্যটন খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় রয়েছে দেশের প্রকৃতিভাবে ঘড়ে উঠা সুউচ্চ পাহাড় ডিম পাহাড়, কেউক্রাডং, তাজিংডং, রেমাক্রীখুম, ঙাফাখুম, বেলাখুম, আমিয়াখুম, দেবতাকুম, বগালেক, রিঝুক ঝর্ণা, কুুমারী ঝণাসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু ছুটে আসেন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।

পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করতে তিন উপজেলায় পর্যটকদের পথ প্রদর্শক , ইঞ্জিন চালিত নৌকা শ্রমিক, ছোটযান পরিবহন শ্রমিকসহ হোটেল-মোটেল রিসোর্ট শ্রমিকের আয় রোজগারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন স্থানীয় দেড় হাজারে ও বেশি মানুষের পরিবার । তবে দীর্ঘ ৮ মাস ধরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে পারছেন না পর্যটকরা। এতে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে এতে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আয়ের অভাবে সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘ এই নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলে উপজেলার পর্যটনশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। থানচি হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল ডিসকভার পরিচালরক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়বে। তাই এখানকার মানুষের আয়-রোজগারের কথা বিবেচনা করে সরকারকে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পর্যটক পথ প্রদর্শক কল্যাণ সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. মামুনর রশিদ বলেন, আমাদের সমিতিতে দুইশতজন পর্যক পথ প্রদর্শক রয়েছে গত ৮ মাস দরে আমাদের আয় রোজগাড় নেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিধায় এক দিকে রোজগাড় নেই অন্য দিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানান সমস্যা সৃস্টি হচ্ছে। আমাদের অসহায়ত্ব সুযোগের পর্যটক ভ্রমণের অন্তত পক্ষে সাংগু নদীর পথটি খুলে দিয়ে রেমাক্রীখুম ও ঙাফাখুম পর্যন্ত ভ্রমণে সুযোগ দেয়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আবেদন করছি।

ইজ্ঞিন চালিত বোট মালিক সমিতি, পর্যটক পথ প্রদর্শক কল্যাণ সমিতি, হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি সকল সদস্যদের পক্ষে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো এ বিষয়ের মাননীয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীর যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে গত বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন বান্দরবান জেলা প্রশাসন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন